বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু। বুধবার (১৪ মে) দিবাগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর আফতাবনগর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া ১৮ বছর বয়সী আরিফ হত্যাকাণ্ডের মামলায় ধনুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বছরের ২৬ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া ওই মামলায় ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এতে ধনুর নামও এজাহারে ছিল।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন সাবেক এই এমপি। অবশেষে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ শুরু হলো।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হয়েছিলেন কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু। এর আগে তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ক্ষমতায় থাকার সময় ভালুকায় গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব প্রভাব-সিন্ডিকেট এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
অভিযোগ রয়েছে, তার স্বজনদের নামে বিভিন্ন সরকারি ঠিকাদারি কাজ নিয় লুটপাট করেছেন সাবেক এমপি ধনু। বিশেষ করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাদ্য ও পথ্য দরপত্রের ঠিকাদারি বাগিয়ে নেন ধনুর মামাতো ভাই আতিক। হাসপাতালের দরিদ্র রোগীর চিকিৎসা তহবিলের টাকাও হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমে ‘হাসপাতালে ধনু এমপির শাসন’ শিরোনামে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, খাসির মাংস মাত্র ১০০ টাকা কেজি দরে সরবরাহের কথা বলে দরপত্র নেওয়া হলেও বাস্তবে তার সঠিক হিসাব মেলেনি। গরিব রোগীদের জন্য বরাদ্দ টাকা কৌশলে ধনুর স্বজন ও সহযোগীরা আত্মসাৎ করেছেন।
এমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিন পড়েছিলেন চাপের মুখে। একপর্যায়ে থানায় জিডি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও মিলেনি সমাধান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ধনুর বিরুদ্ধে কথা বললেই হুমকি, প্রভাব এবং বদলির ভয় দেখানো হতো। ক্ষমতার সময় কেউ তার বিরুদ্ধে সহজে মুখ খুলতে পারতেন না।
বর্তমানে ধনুর বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আরও তিনটি মামলা চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।