বগুড়ার শেরপুর উপজেলার অন্যতম বিদ্যাপীঠ টাউনক্লাব পাবলিক লাইব্রেরি মহিলা ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগকে ঘিরে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ আনেন কলেজের গভর্নিং বডির দুই সদস্য।
তাঁরা বিষয়টি লিখিত আকারে গত ৭ মে জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরে দাখিল করেন।
অভিযোগকারীরা হলেন, কলেজের গভর্নিং বডির বিদ্যোৎসাহী সদস্য পিয়ার হোসেন পিয়ার এবং দাতা সদস্য জাহিদুর রহমান টুলু।
জানা গেছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ গত ১০ মার্চ দৈনিক যুগান্তর ও করতোয়া পত্রিকায় অধ্যক্ষ পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আবেদন করেন ১৩ জন। এরপর ৩ মে অনুষ্ঠিত হয় লিখিত পরীক্ষা, সেখানে অংশ নেন ১০ জন প্রার্থী। উত্তীর্ণ চারজনের মধ্যে সিরাজগঞ্জের সায়দাবাদের যমুনা ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেনকে চূড়ান্তাবে সুপারিশ করে নিয়োগ কমিটি।
তবে সেই দিনই শুরু হয় গুঞ্জন। নিয়মিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর পরীক্ষা শুরু, সংবাদকর্মীদের তথ্য নিতে কলেজে ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনা এবং পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়, নিয়োগ নির্বাচনী কমিটি গঠন ও সিদ্ধান্তের পেছনে ছিল রাজনৈতিক প্রভাব ও আর্থিক লেনদেনের ছায়া।
অভিযোগে গভর্নিং বডির দুই সদস্য দাবি করেন, কলেজের সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কেএম মাহবুবার রহমান হারেজ এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান প্রার্থী মো. জাকির হোসেনের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করে তাকে নিয়োগে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
এছাড়া অভিযোগকারীদের মতে, গভর্নিং বডির প্রকৃত সদস্যদের বাদ দিয়ে ঘনিষ্ঠদের নিয়ে গোপনে কমিটি গঠন করা হয়, যাতে আপত্তিকর ও অনিয়মতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হয়।
চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিতর্ক। তার বর্তমান কর্মস্থল যমুনা ডিগ্রি কলেজে ফান্ড তছরুপ, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা এবং নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ কাজের অভিযোগ গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
গভর্নিং বডির সদস্য পিয়ার হোসেন পিয়ার ও জাহিদুর রহমান টুলু বলেন,“এই কলেজটি এলাকায় নারী শিক্ষার জন্য একটি অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে এত বড় অনিয়ম হলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়বে। তাই আমরা বর্তমান সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অপসারণ করে পুনরায় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ চাচ্ছি।”
অন্যদিকে, অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন,“লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। নিয়োগ বোর্ডের পাঁচ সদস্য স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। এখানে আমার ব্যক্তিগত দায় নেই।”
কলেজের সভাপতি কেএম মাহবুবার রহমান হারেজ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “নিয়োগ সম্পূর্ণ নিয়ম অনুসারে হয়েছে। আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সহকারী কমিশনার (শিক্ষানবিশ) ফয়সাল মাহমুদের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি