প্রিয় শখের সেই পুরুষের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। নিহত রিমার ভাই আজগর হোসেন বাদী হয়ে পটিয়া থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় রিমার হবু স্বামী ব্যাংকার মিজানুর রহমান মোরশেদকে আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ জুন) মামলাটি করা হয় বলে জানিয়েছেন পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। আজ শনিবার হবু স্বামীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তালাবদ্ধ। মা–বাবাসহ বর মিজানুর পলাতক।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁওয়ে হীরা তালুকদার বাড়িতে এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। পটিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রিমা আক্তারের বাড়ি উপজেলার হাইদগাঁও গ্রামে। একই এলাকার মিজানুর রহমান মোরশেদের সঙ্গে রিমার ৪ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে শুক্রবার (২৮ জুন) বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারিত ছিল। বিয়ের সব আয়োজন শেষও হয়। কিন্তু গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের দিন হবু স্বামীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলার এক পর্যায়ে যৌতুকের জন্য রিমা ও তার পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করা হয়। যৌতুকের চাপ সহ্য করতে না পেরে তরুণী রিমা আক্তার আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় এবং আত্মহত্যার আগে একটি চিরকুট লিখে যায় রিমা।
চিরকুকেটে লেখা ছিল, ‘প্রিয় শখের পুরুষ, তুমি করো তোমার বিয়ে, অনেক ভালোবেসেছ, অতিরিক্ত যন্ত্রণাও দিয়েছ। আমি এত যন্ত্রণা নিতে পারছি না। বাকি জীবনটা সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পারলাম না। ভালো থেকো প্রিয় মানুষ। আজকের দিনে তোমার যন্ত্রণাটা নিতে পারছি না। আমার পরিবার থেকে যে যৌতুকের টাকা তোমাদেরকে দিয়েছে, সেগুলো টাকা শোধ করে দিও। তুমি আমাকে বাঁচতে দিলে না।
আমি বাঁচতে পারতাম যদি আমি বেশি মান-সম্মানওয়ালা পরিবারে জন্মগ্রহণ না করতাম। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমার ’পোস্টমর্টেম’ করিয়ে আমার সব যন্ত্রণা ধুয়ে মুছে আমাকে কবরে পাঠিয়ে দিও। আর আমার পরিবারের সবাইকে বলছি, তোমরা কেউ মোরশেদকে ছাড়বা না। তোমরা ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি দিবে।
শুক্রবার (২৮ জুন) নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বাদ মাগরিব জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এসময় পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবসাীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
জানা গেছে, বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য গেট সাজানো হয়েছে। মেহেদি অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা হয়েছে স্টেজ। বিয়ের রান্নাবান্নার জন্য সব সরঞ্জাম নিয়ে আসা হয়েছে রিমার বাড়িতে। যে গেট দিয়ে রিমা বউ সেজে মোরশেদের বাড়িতে যাওয়ার কথা সেই গেট দিয়ে ঢুকল রিমার নিথর দেহ। গতকাল মাগরিবের নামাজের পর নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দিন বলেন, যৌতুকের চাপে গায়ে হলুদের দিন তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনায় হবু স্বামীর বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই আসামি মিজানুর রহমান পলাতক রয়েছে। আমরা তাকে ধরার জন্য অভিযান পরিচালনা করছি। এ ঘটনায় আরও কেউ যদি জড়িত থাকেন তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।