বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় কর্তৃপক্ষ বেশকয়েকটি পরিবহন টার্মিনাল ইজারা দিয়েছে যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কাগজে কলমে বাসটার্মিনালের উল্লেখ যোগ্য জায়গা না থাকলেও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, ট্রাক টার্মিনাল, সিএনজি অটোরিক্সা টার্মিনাল ও ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা স্ট্যান্ড দেখিয়ে ২৫ নভেম্বর দরপত্রের পর মোট ৪০ লক্ষ টাকার বেশি মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়।
এতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। মহাসড়কে পরিবহনে অবৈধ চাঁদাবাজিকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। দরপত্র অনুযায়ি ১ জানুয়ারী থেকে মিনিবাস থেকে ৫০ টাকা, সিএনজি থেকে ২০ টাকা, ট্রাক থেকে ৫০ টাকা, পিক-আপ ও কাভার্ড ভ্যান থেকে ৩০ টাকা ও ব্যাটারীচালিতঅটোরিক্সা থেকে ১০ টাকাহারে টোল আদায় করা শুরু হয়েছে।
পৌরনথি অনুসারে, লিজ দেওয়া টার্মিনাল এলাকাটি বগুড়ার শেরপুর শহরের ধুনটমোড় অঞ্চলের মাত্র ৩ একর জুড়ে বিস্তৃত। এরমধ্যে কিছু জায়গা সরকার মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য অধিগ্রহণ করেছে, সেখানে একটি অংশে রয়েছে দোকান ঘর। বাকি ফাঁকা জায়গা রয়েছে মাত্র ১ একর। এই জায়গাটিই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, ট্রাক টার্মিনাল, সিএনজি অটোরিক্সা টার্মিনাল ও ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা স্ট্যান্ড দেখিয়ে এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। এতে ইজারা গ্রহীতারা শহরজুড়ে যানবাহন থেকে টোল আদায় করছেন।
২৫ নভেম্বর সম্পন্ন হওয়া টেন্ডারে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ১০ লক্ষ ৫ হাজার টাকা, ট্রাক টার্মিনাল ৮ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, সিএনজি অটোরিক্সা টার্মিনাল ৮ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ও ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা স্ট্যান্ড ১২ লক্ষ ৫ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন তিনজন ব্যক্তি।
এছাড়াও দরপত্র অনুযায়ী ইজারা না দেওয়া হলেও সরকার অনুমোদিত ভটভটি থেকে ২০ টাকা হারে টোল আদায়ের অনুমোদন দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ইজারা দেওয়া হলেও সরেজমিনে পৌরসভার টার্মিনাল বা স্ট্যান্ডের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ইজারাদারদের লোকজন শহরের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন থেকে টোল আদায় করছেন।
অথচ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে টার্মিনাল ব্যতিরেকে কোনো সড়ক বা মহাসড়ক থেকে টোল উত্তোলন না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টার্মিনাল না থাকা সত্বেও ইজারা দিয়ে টোল আদায় করাকে চাঁদাবাজি বলে মনে করছেন পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বলেন, শেরপুরে পৌরসভার কোনো বাস টার্মিনাল নেই। আমরা মালিকেরা প্রতিমাসে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে টার্মিনালের জন্য জায়গা ভাড়া নিয়েছি। যেহেতু পৌরসভার কোনো টার্মিনাল নেই সে হিসেবে আমাদের বাসগুলো থেকে চাঁদা নেওয়া অবৈধ বলে আমি মনেকরি।”
বগুড়া জেলা ট্রাক ট্যাংকলরী ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিরু বলেন, শেরপুরে প্রকৃতপক্ষে কোন ট্রাক টার্মিনাল নেই। আগে যেখানে টার্মিনাল ছিলো বহুআগে দোকান করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা মহাসড়কের পাশে ট্রাক রাখছি। এত প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রাকগুলোর কোনো নিরাপত্তা নেই। পৌরসভার কাছ থেকে আমরা কোনো সেবা পাচ্ছিনা। অথচ মহাসড়ক থেকে পৌর টোলের নামে চাঁদা তোলা হচ্ছে।
এদিকে ইতমধ্যেই টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে একাধিকবার বিক্ষোভ করেছেন সিএনজি ও ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা চালকরা। তারা কয়েক দফায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষুব্ধ ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চালক রইচ উদ্দিন প্রামানিক বলেন, আমাদের সাথে আগের মতোই জুলুম শুরু হয়েছে। ৫ আগস্টের পরে বন্ধ হলেও শহরের বিভিন্ন সড়কে ও মহাসড়কে রিকশা থামিয়ে ১০ থেকে ২০ করেটাকা নেওয়া হচ্ছে। টাকা নাদিলে চাবি কেড়ে নেয়, ছবিতুলে কোন এক নেতাকে পাঠায়। পরে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এসব বন্ধ না হলে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপদেষ্টা ইয়াছিন আলী হিমেল বলেন, শেরপুরে পৌরসভার কোন টার্মিনাল বা স্ট্যান্ড নেই। পৌরকর্তৃপক্ষ আয় বাড়ানোর নামে প্রকৃতপক্ষে সড়ক ও মহাসড়ক ইজারা দিয়েছে। এসব বন্ধ করা দরকার।
এ বিষয়ে বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র জানে আলম খোকা বলেন, সোর্স অফ ইনকাম বাড়ানোর জন্য পৌরসভার এই উদ্যোগ সময়পোযোগী বলে আমিমনে করি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার বাহিরে যেন কোনো কর্মকান্ড কেউ করতে না পারে সে ব্যপারে সজাগ থাকতে হবে। এ বিষয়ে সকল পরিবহন সেক্টর নিয়ে আমরা আলোচনা করছি যেন কোনো ভাবেই চাঁদাবাজি করতে না পারে।
এদিকে টার্মিনাল না থাকার কথা স্বীকার করে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক আশিক খান জানান, টার্মিনাল না থাকলেও পৌরসভার রাজস্ব আয়ের জন্য অতীতের ধারাবাহিকতায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে মহাসড়ক থেকে টোল আদায় না করার জন্য ইজারাদারদের বলা হয়েছে।
এদিকে টোল আদায় করানিয়ে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চালকদের অসন্তোষের বিষয়ে তিনি বলেন, ”ইতিমধ্যে ইজারাদার, শ্রমিক সংগঠন ও অটোরিকশা চালকদের সাথে যৌথ আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইজারাগ্রহিতা ও চালকদের মধ্যে ঐক্যমত না হওয়া পর্যন্ত টোল আদায় বন্ধ থাকবে এবং প্রয়োজনে ইজারা বাতিল করা হবে।