বগুড়ার শেরপুরে স্কুল উন্নয়ন তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে দাখিলকৃত ভাউচারে লক্ষ করা গেছে অনেক অসংগতি। অভিযুক্ত অকলিমা উপজেলার চকখাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।
স্কুলটির বর্তমানের নতুন ভবনে পাঠদান কর্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে। শেরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ি ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সেখানে বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা (স্লিপ) তহবিল থেকে ৫০ হাজার, ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ২ লক্ষ ও রুটিন মেরামত বাবাদ ৪০ হাজার মোট ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এর অধিকাংশ টাকাই খরচ না করে প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন বলে জানিয়েছেন স্কুলের সহকারি শিক্ষকগণ। এছাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে দাখিলকৃত প্রায় সকল ভাউচারই ভুয়া বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দোকানের মালিকেরা।
ক্ষুদ্র মেরামতের বিল ভাউচারে উল্লেখ করা হয়েছে গোরা ষ্টোর থেকে ‘ভবন সজ্জিত করন ১টি ২৫ হাজার টাকা’, জানালা রং বাবদ ২৫ হাজার টাকা এবং রুটিন মেরামতের তহবিল থেকে এনার্জি বাল্ব ও ইলেক্ট্রিক সামগ্রী ৬ হাজার টাকার ক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু দোকানের মালিক প্রলয় কুমার কুন্ডু জানান তিনি প্রতিষ্ঠানটির কাছে এধরেন কোন সামগ্রী বিক্রি করেননি। তাছাড়া বিল ভাউচারে তাদের কোন সাক্ষরও নেই। একই ভাবে লাকী এস এস ষ্টিল কর্পোরেশনের “জানালা মেরামত ও হাতুল লাগানো বাবদ” খরচ ২৫ হাজার টাকার ভউচারটিও ভুয়া বলে দাবি করেছেন দোকানের মালিক নাজমুল হোসাইন।
‘কলাপসিবল গেট স্থাপনের ২৫ হাজার টাকা’ নেওয়ার কথাও অস্বীকার করেছেন শেরপুরের বর্ষা ষ্টীল হাউজের মালিক আব্দুল বাছেদ। এছাড়া সরেজমিনে স্কুলে গিয়ে নতুন কোন কলাপসিবল গেটের অস্তিত্বও মেলেনি। বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষকগণ।
সহকারি শিক্ষক মনোয়ারা খাতুন বলেছেন, ”স্কুলে প্রায় ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখিত ভাউচারের সাথে কাজের কোন মিল নেই। কলাপসিবল গেট তৈরি, চেয়ার টেবিল কেনা, ভবন মেরামত করা ইত্যাদি এধরণের কোন কাজ করা হয়নি। বরং প্রাক-প্রাথমিক শেণীর জন্য শিক্ষা উপকরণ কেনার কথা বললে প্রধান শিক্ষক অর্থ সংকটের কথা জানিয়েছেন।“
সহকারি শিক্ষক মাশেদা খাতুন বলেন, “গত অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে ৩টি গ্রিল তৈরি ও একটি কক্ষের মেঝেতে টাইলস লাগানো হয়েছে। এছাড়াও ভবন রং ও কিছু কিছু অংশ মেরামত করা হয়েছে। তাতে সবমিলিয়ে দেড় লক্ষ টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা না।”
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার কারেছেন চকখাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আকলিমা। তিনি বলেন, ”কাজ করে সঠিকভাবে হিসাব দাখিল করার পর শিক্ষা অফিস থেকে অর্থ ছাড় করেছে। তাই অর্থ আত্মসাতের প্রশ্নই আসে না।”
বগুড়ার শেরপুরে স্কুল উন্নয়ন তহবিলের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে শেরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ”বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হবে। কোন ধরণের অনিয়ম দেখা গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”