কি অপরাধ ছিল আমার মেয়ের? কেন তাকে নিজ বাড়ির বারান্দায় গুলিতে মরতে হলো? আমার মেয়ের আর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না। আমার মেয়ে বলেছিল, বাবা তুমি ডাক্তার, আমিও ডাক্তার হয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করব।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সংবাদ মাধ্যমে এসব কথা বলেছিলেন গত (১৯ জুলাই) কোটা আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর উত্তরায় ৪ তলা বাড়ির বারান্দায় গুলিতে নিহত নাইমা আক্তার সুলতানার বাবা মো: গোলাম মোস্তফা।
নিহতের বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন , শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেলের দিকে বাড়ির কাছেই গোলাগুলি হচ্ছিল। নাইমা ওই সময় বারান্দায় কাপড় আনতে যায়। হঠাৎ একটি গুলি এসে তার মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে সে বারান্দায় তার মায়ের সামনেই লুটিয়ে পড়ে।
তখন আমার মেয়ে নাইমার নাক-মুখ থেকে রক্ত বের হতে থাকে। বাসা থেকে তাকে রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখাননের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমরা কার কাছে বিচার চাইব? কার কাছে অভিযোগ করব? আমাদের এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজ খবর নেয়নি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
গত ১৯ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় সরকারি চাকরি কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। সেখানে পুলিশ- আন্দোলকারীদের মধ্যে ধওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সড়কের পাশেই একটি ভবনের ৪ তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকত উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী নাইমা আক্তার সুলতানা।
কে জানত বাড়ির বারান্দায় শুকনো কাপড় আনতে গিয়ে মাথায় গুলি লাগবে নাইমার। গুলিবিদ্ধ হয়ে বারান্দাতেই লুটিয়ে পড়ে সে। পরে তার মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক নাইমাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন শনিবার (২০ জুলাই) নাইমাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
নাইমার পরনের সেই রক্তভেজা পোশাকই যেন এখন তার পরিবারের একমাত্র সম্বল। প্রতিনিয়ত তার এই রক্তমাখা পোশাক ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন আর আহাজারি করছেন তার স্বজনরা। আর এই দৃশ্য দেখে তাদের প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। নিহত নাইমার পরিবার ও স্বজনদের একটাই প্রশ্ন-কী অপরাধে কারা এভাবে নাইমাকে গুলি করে মারল? এই হত্যার বিচার চান তার পরিবার।