জামালপুরে চরম দুর্ভোগে রয়েছে বানভাসি মানুষ। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং ভারি বর্ষণে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। জেলার সবগুলো নদ-নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৬ উপজেলায় বন্যায় দেড় লখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
একটানা ৪ দিন যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা এবং নদী তীরবর্তী ও দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষজন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। ভীষণ সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে গত ২ দিনের তুলনায় পানি একটু ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জামালপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্যায় জামালপুরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষজন। বাড়ি-ঘরে পানি উঠায় অনেকই আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল এবং উঁচু স্থানে। বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে।
দেওয়ানগঞ্জের গুজিমারি গ্রামের মো: জুয়েল জানান, বাড়ি-ঘরে পানি উঠার কারণে রেলস্টেশনে গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। অনেক অসুবিধায় রয়েছি। নিজেদের খাবার নেই, গরু-ছাগলেরও খাবার নেই। কি যে করি ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেছি।
৭০ বছরের চান মিয়া জানান, ঘরের মধ্যে কোমর পানি। কোথাও থাকার জায়গা নেই। কি করবো, কেউ তো কোনও কিছু দেয় না। খোঁজ-খবরও নেয় না। প্রায় ৩ বছর ধরে পড়ে আছি রেল লাইনে।
এছাড়া জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ উপজেলাসহ ৬টি উপজেলার মোট ৪২টি ইউনিয়নের দেড় লাখেরও বেশি মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ১২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩০০ মেট্রিকটন চাউল ও সাড়ে ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো: আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর জন্য ১৯০ মেট্রিক টন চাল এবং ১ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ রয়েছে। যেকোনো এলাকায় বন্যা ও ভাঙনের খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে।