‘জানাজা পাবো না, আমার ঠিকানা হবে জাহান্নামে’ ৭ পৃষ্ঠার এক চিরকুটে এমনটি লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌসী সুমাইয়া (১৯) নামের এক গৃহবধূ। নিহত গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহালের প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
শনিবার (১৩ জুলাই) দিবাগত রাতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের বিশগিরীপাড়া গ্রামে ৭ পৃষ্ঠার চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেন সুমাইয়া। নিহত জান্নাতুল ফেরদৌসী সুমাইয়া উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের মো: আবুবকর সিদ্দিকের মেয়ে।
৭ পৃষ্ঠার ওই চিরকুটে সুমাইয়া লিখেছে, বিয়ের গোসলটাও পেলাম না। শেষ গোসলটাও পাবো না। ‘জানাজা পাবো না। আমার ঠিকানা হবে জাহান্নামে। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি শিপন, কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত তোমার সাথে থাকতে দিলে না আমায়।’
তিনি আরো লেখেন, ‘আমি চাইলে দ্বিতীয় বিয়ে করে জীবনটা ভালোভাবে কাটাতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই না অন্য কেউ আমার শরীরটা উপভোগ করুক।’
বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে চিরকুটে সুমাইয়া লিখেছেন, ‘তোমরা কেউ মনে কষ্ট নিও না। শিপনকে সুখে রাখার জন্য আমি চলে যাচ্ছি। আমার মুখ শিপনকে দেখতে দিও না। আমার শরীরটাকে কাটতে দিও না। আমি তাহলে কষ্ট পাবো।’
আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে নালিতাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মনিরুল আলম ভূঁইয়া জানান, নিহত গৃহবধূ সুমাইয়ার মরদেহ ও চিরকুট উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিহত সুমাইয়ার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১ বছর আগে শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের সাপমারী গ্রামের মো: হযরত আলীর ছেলে মো: শিপন আহাম্মেদের সাথে পরিবারের অমতে বিয়ে হয় সুমাইয়ার।
এর আগে, ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের দুজনের পরিচয় হয়। ওই সময় শিপন নিজেকে সেনাবাহিনীতে কর্মরত পরিচয় দিয়ে সুমাইয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে সুমাইয়ার বিশ্বাস যোগাতে সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত নিজের ছবি পাঠিয়ে প্রতারণা করেন শিপন। পরে সুমাইয়া জানতে পারে শিপন রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে দিনমজুরের কাজ করেন। তারপরও পরিবারের অমতে শিপনকে বিয়ে করেন সুমাইয়া।
স্বজনরা জানিয়েছেন, বিয়ের পর একটি এনজিও থেকে সুমাইয়ার নামে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ঋণ তোলার পর ওই টাকাগুলো শিপন ও তার ভাইয়েরা ভাগ করে নেন। তারপর শিপন ওই ঋণের টাকা সুমাইয়ার পরিবারকে পরিশোধ করার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলো। এসব বিষয় নিয়ে অভিমান করে গত রোজার ঈদে সুমাইয়া তার বাবার বাড়িতে চলে আসেন। এরপর থেকে সুমাই সেখানেই থাকছিলেন। শনিবার রাতে ক্ষোভে-অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন সুমাইয়া।