ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে অশালীন ভিডিও কল, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করে মানসিকভাবে হেনস্তা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১২ জন ছাত্রী যৌথভাবে বিভাগের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ২২ জুন জমা দেওয়া ওই অভিযোগে শিক্ষক ড. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক আচরণের বিস্তারিত বিবরণ উঠে আসে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিভাগের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ পত্রে বলেন, “স্যার আমাকে ইমোতে ভিডিও কল দেন। কল না ধরায় অডিও কলে বলেন, ‘অনেকদিন দেখি না, মোটা হয়েছো না চিকন তা দেখার জন্যই ভিডিও কল দিচ্ছি।’ এরপর বলেন, ‘তোমার কি কথা বলার কেউ আছে? এখন বলছো কেউ নাই, পরে দেখবো ক্যাম্পাসে কারও হাত ধরে ঘুরছো কিনা।’”
শুধু তা-ই নয়, অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে, ক্লাসে ওই শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করে উচ্চতা ও শারীরিক গঠন নিয়ে কুরুচিপূর্ণ রসিকতা করতেন অভিযুক্ত শিক্ষক। মাসিক চক্র নিয়ে প্রকাশ্যে অসম্মানজনক মন্তব্য, ভালো রেজাল্ট না দেওয়ার হুমকি দিয়ে বডি শেমিং, এসব অভিযোগও উঠে এসেছে।
অন্য একাধিক ছাত্রী অভিযোগ করেছেন, শিক্ষক নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপে কুরুচিপূর্ণ বার্তা পাঠাতেন। একপর্যায়ে কেউ কেউ তাঁর ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, প্রজেক্টে জোর করে রাখা, রুমে ডেকে নিয়ে ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করা, রেজাল্টে প্রভাব ফেলার ভয় দেখিয়ে মনের মতো আচরণ করানোর চেষ্টা, এসবই ঘটেছে বহুবার।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. একেএম নাজমুল হুদা বলেন, “আমরা একাডেমিক কমিটির জরুরি সভা ডেকে অভিযোগ পর্যালোচনা করেছি। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ফলে তাঁকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এ ঘটনায় পরবর্তী তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করতেই প্রশাসনের এই পদক্ষেপ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. আজিজুল ইসলাম দাবি করেন, “আমি কাউকে হেনস্তা করিনি। শিক্ষার্থীরা আমার কথাকে ভুলভাবে নিয়েছে। এসব ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ। আমি শুধু বলেছিলাম, ক্লাসে যেন সবাই সুন্দর পোশাকে আসে, আন্তরিকতা থেকেই বলেছিলাম।”
তবে অভিযোগকারীরা বলেন, শিক্ষকের কথাবার্তায় আন্তরিকতা নয়, বরং অশোভন ও অসভ্য মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। বিষয়টি বহুদিন ধরে চললেও তারা এতদিন মুখ খোলেননি, কারণ ছিল ভয়ের। তবে এবার তারা সম্মিলিতভাবে অভিযোগ করে ন্যায়বিচার চান।