মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে একই মামলার অন্য তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। মাত্র ২১ দিনের বিচার কার্যক্রম শেষে এই রায় দেওয়া হলো, যা স্থানীয়ভাবে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত বিশেষ কৌঁসুলি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদাপ্রাপ্ত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।
শিশু আছিয়া চলতি বছরের ৬ মার্চ বেড়াতে গিয়েছিল বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ১৩ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণের পর ২৩ এপ্রিল থেকে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় হিটু শেখের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যু) অভিযোগ গঠন করা হয়। অন্যদিকে, শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশে (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্ট) অভিযোগ আনা হয়। তবে পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে শেষ পর্যন্ত ওই তিনজনকে খালাস দেওয়া হয়।
এই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয় ২৩ এপ্রিল এবং সাক্ষ্য গ্রহণ চলে ২৭ এপ্রিল থেকে একটানা, ছুটির দিন ছাড়া। সব আসামির উপস্থিতিতেই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ঘটনার মাত্র ৭৩ দিনের মাথায় এই মামলার রায় ঘোষণা হলো। তদন্ত শেষ করতে পুলিশ সময় নিয়েছে মাত্র ৩৭ দিন।
মামলার অন্যতম মোড় নেয় ১৫ মার্চ, যখন হিটু শেখ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেটিই মামলার মূল প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।