বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে দানকৃত জমি ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর উপজেলা প্রশাসন তদন্তে নেমেছে এবং গঠিত হয়েছে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি।
অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম মঞ্জু উপজেলার পাঁচ দেউলী পলাশ মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক। তিনি ১৯৮৭ সালে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন এবং ২০১৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, ২০২০ সালে তিনি ও তাঁর ভাই তোফাজ্জল ইসলাম মিলে বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষা তিন শতাংশ জমি স্থানীয় রোকেয়া বেগমের কাছে রেজিস্ট্রি করে বিক্রি করে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আশির দশকের শুরুতে স্থানীয়দের উদ্যোগে পাঁচ দেউলী পলাশ মেমোরিয়াল বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়, যেখানে শুরু থেকেই রফিকুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিদ্যালয়ের জমির বড় একটি অংশ প্রায় ২৩ শতাংশ ১৯৯৭ সালে তাঁর চাচা, পল্লী চিকিৎসক হেদায়েতুল ইসলাম, দানপত্রের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর করেন। সংশ্লিষ্ট জমিটি তখনই বিদ্যালয়ের নামে নামজারি হয়ে সরকারি খতিয়ানভুক্ত হয়।
তবে পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হলেও পাঁচ শতক জমি এর বাইরে রয়ে যায়। সেই জমির মধ্য থেকে তিন শতাংশ জমি বিক্রি করা হয় রোকেয়া বেগমের নামে। বর্তমানে তিনি পরিবারসহ সেখানে বসবাস করছেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে গত ১৪ জুন উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনিসুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, “বিদ্যালয়ের নামে নামজারি করা এবং জমির খাজনা নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে। সেই জমি কিভাবে ব্যক্তিমালিকানায় রেজিস্ট্রি হলো, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। অভিযুক্ত শিক্ষক প্রাথমিকভাবে জমি বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন এবং আগামী দুই মাসের মধ্যে জমি ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।”
এদিকে জমি কিনে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা রোকেয়া বেগম। তিনি বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ। কাগজপত্রের জটিলতা বুঝিনি। হেডস্যার নিজেই আমাদের কাছে দলিল করেছেন। আমরা টাকা দিয়েছি। এখন যদি দলিল বাতিল হয়, তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো?”
তবে রফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “জমিটি আমার বাবার নামে রেকর্ড ছিল। আমরা ওয়ারিশ হিসেবে বিক্রি করেছি।”
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, “বিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় স্কুলের জমি রক্ষা করা রফিকুল ইসলামের দায়িত্ব ছিল। রেকর্ড যদি তাঁর বাবার নামেও থাকত, তা সংশোধনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব তাঁরই ছিল। কিন্তু তিনি বরং তা বিক্রি করেছেন, যা গুরুতর অপরাধ। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শেরপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান জানান, “নিবন্ধন ম্যানুয়াল ২০১৪-এর ৪২(১) ধারা অনুযায়ী জমির খাজনা, খারিজ বা মালিকানা যাচাই করা আমাদের দায়িত্ব নয়। আমরা শুধু দলিল নিবন্ধনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করি। তবে কেউ প্রতারণার শিকার হলে তারা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।”
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খান বলেন, “তদন্ত কমিটিকে দ্রæত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষকসহ প্রয়োজন অনুযায়ী সাব-রেজিস্ট্রারকেও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। প্রশাসন বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”