বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বৃন্দাবন পাড়ায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সনাতন ধর্মের শিব গাজনের অংশ হিসেবে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এই পূজায় ভক্তি, সাহসিকতা ও আধ্যাত্মিকতার অপূর্ব মেলবন্ধন দেখা যায়।

পূজার মূল আকর্ষণ ছিল শিবভক্তদের শারীরিক কসরত। পিঠে গাঁথা লোহার বড়শি দিয়ে ঘূর্ণায়মান চড়ক গাছে নিজেকে নিবেদন করেন কয়েকজন ভক্ত। এই দৃশ্য শুধু চোখে নয়, হৃদয়েও নাড়া দেয় উপস্থিত হাজারো দর্শনার্থীর। সাহস, ত্যাগ ও নিষ্ঠার এমন প্রকাশে মোহিত হন সকলে। দর্শনার্থীরা বলেন, “ভক্তদের এই আত্মত্যাগ সত্যিকারের ভক্তির নিদর্শন, যা শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, আত্মায় আলোড়ন তোলে।”


এই ব্যতিক্রমী চড়ক পূজা দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন নানা বয়সী মানুষ। উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বৃন্দাবন পাড়ায় জড়ো হয় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ্য জনতা। উৎসবের দিনে এলাকায় সৃষ্টি হয় এক মিলনমেলা, যেখানে ভক্তি, সংস্কৃতি ও লোকজ ঐতিহ্য একত্রে বিস্তার লাভ করে।


সকালে শিবের পূজা, যজ্ঞ ও ভক্তিমূলক সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এরপর বিকেলে চড়ক গাছ ঘিরে চলে মূল পর্ব। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী অপশক্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায় এবং আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে এই বড়শি গাঁথা কসরত পালন করেন শিবভক্তরা। তারা বিশ্বাস করেন—এই যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই পাওয়া যায় শিবের কৃপা ও আত্মিক মুক্তি।


পূজা উপলক্ষে বসে গ্রামীণ মেলা, যেখানে হস্তশিল্প, প্রসাদ, খাবার, খেলনা ও বিনোদনের নানা আয়োজন স্থান পায়। নাগরদোলা, পালাগান ও ভক্তিমূলক সঙ্গীতের তালে তালে মুখর হয়ে ওঠে পুরো বৃন্দাবন পাড়া।
স্থানীয় পূজা কমিটির সভাপতি বলেন, “এটা শুধু পূজা নয়, এটি আমাদের আত্মার উৎসব। শত বছরের এই ঐতিহ্য আমরা আগামী প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে চাই।”
পূজা নির্বিঘ্ন করতে স্বেচ্ছাসেবক দল সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন।
এই চড়ক পূজা শুধু একটি ধর্মীয় আয়োজন নয়—এটি বিশ্বাস, ভক্তি, সাহস ও সামাজিক ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা যুগের পর যুগ ধরে বৃন্দাবন পাড়াকে করে তুলেছে এক অনন্য ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক কেন্দ্র