সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে নতুন এক ধাক্কা, গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে থাকা মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকালে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ আদালতকে জানান, এই নথি গত বছরের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থাণের সময় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও জানান, “তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করছি। তবে মামলার নিষ্পত্তিতে আরও সময় প্রয়োজন।” এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ ৯ মাস সময় চাইলেও আদালত রাষ্ট্র পক্ষকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেন।
২০১২ সালের(১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ বাসায় নির্মমভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। মামলার শুরুতে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানা। পরে তদন্ত যায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)। প্রায় ৬২ দিনের তদন্তে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর হাইকোর্ট মামলাটি র্যাবকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
এরপর দীর্ঘ সময় পর ২০২৪ সালে ৪ নভেম্বর মামলার দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। ওই সময় পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক বলেন, “র্যাবের কাছ থেকে মামলার সব কাগজপত্র বুঝে পেয়েছি। নতুনভাবে তদন্ত শুরু করেছি।”
২০১৫ সালের (০২ ফেব্রুয়ারি) র্যাব আদালতকে জানায়, সাংবাদিক সাগর-রুনির বাসা থেকে সংগৃহীত আলামতের ডিএনএ বিশ্লেষণে অজ্ঞাতপরিচয় দুই পুরুষের উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইনডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিসেস (ওঋঝ) ল্যাবে নমুনা পাঠানো হলেও সন্তোষজনক কোনও ফলাফল পাওয়া যায়নি।
ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন জামিনে মুক্ত, বাকিরা এখনও কারাগারে। তবে এই হত্যাণ্ডের মূল রহস্য কিংবা খুনিদের পরিচয় আজও অন্ধকারে।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দেন, তদন্তে বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করতে। একই সঙ্গে ওইস ময় বলা হয়, আগামী ৬ মাসের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে।
সাগর-রুনি হত্যার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও, এখনও জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি কোনও সংস্থা। নথিপত্র হারানোর ঘটনায় প্রশ্ন তুলছে তদন্তের স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতা নিয়ে। অবশেষে কি? ন্যায়বিচার পাবে এই সাংবাদিক দম্পতির পরিবার? দেশবাসী এখন সেই প্রশ্নের জবাব চায়।