অভাব-অনটনের জীবন যাপন করেও সততার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বগুড়ার একজন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক খাইরুল ইসলাম। রাস্তায় পাওয়া প্রায় ২৫ লাখ টাকার ১৮ ভরি সোনার গহনা ও নগদ ১৫ হাজার টাকা অক্ষত অবস্থায় প্রকৃত মালিকের হাতে তুলে দিয়ে সবার হৃদয় জয় করে নিয়েছেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটে ঈদের ঠিক আগে, ২৯ মার্চ। পাবনার ফরিদপুর উপজেলার উত্তর গোপালনগরের জুয়েলারি ব্যবসায়ী মো. শাহিন ব্যবসায়িক কাজে বগুড়া শহরে আসেন। শহরের নিউমার্কেট এলাকা থেকে ২৫ লাখ টাকার সোনার গহনা কেনার পর তা একটি কালো ব্যাগে ভরে সাতমাথা থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে বনানী যান। সেখান থেকে পাবনাগামী বাসে উঠে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন।
তবে বাসটি শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিরা এলাকায় পৌঁছানোর পর শাহিন হঠাৎ খেয়াল করেন, তার কালো ব্যাগটি অটোরিকশায়ই রয়ে গেছে—যার ভেতরে ছিল কোটি টাকার সম্পদসম।
তৎক্ষণাৎ তিনি বাস থেকে নেমে শাহজাহানপুর থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এবং বিভিন্নভাবে অটোচালকের খোঁজ নিতে থাকেন। কয়েকদিন কেটে যায়, কিন্তু ব্যাগের সন্ধান না পেয়ে তিনি প্রায় ভেঙে পড়েন মানসিকভাবে।
অন্যদিকে, ব্যাগটি খুঁজে পান খাইরুল ইসলাম নামের সিএনজি চালক। তবে তিনি ব্যাগটি না খুলেই মালিকের সন্ধান করতে থাকেন। ব্যর্থ হয়ে ব্যাগটি নিয়ে নিজ বাড়ি, শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ি হাজীপাড়ায় ফিরে যান এবং মাকে বিষয়টি জানান। তখন খাইরুলের মা তাকে ব্যাগটি ফিরিয়ে দেওয়ার কঠিন নির্দেশ দেন।
খাইরুল পরে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মইনুদ্দিনের কাছে ব্যাগটি জমা দেন। পুলিশ জিডির সূত্র ধরে প্রকৃত মালিক মো. শাহিনকে শনাক্ত করে ৪ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে থানায় ডেকে আনেন এবং সোনা ও টাকা সমেত তার ব্যাগটি বুঝিয়ে দেন।
ব্যাগ ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত শাহিন বলেন, “আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি এমনটা সম্ভব। একজন দরিদ্র অটোচালক এত বড় অঙ্কের সম্পদ ফেরত দিতে পারে, এটা বাংলাদেশের মানুষকে আবারও বিশ্বাস করতে শেখায়।”
খাইরুল ইসলামের সততায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসার বন্যা বইছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসন—সবার কাছ থেকেই মিলছে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা।
খাইরুল ইসলাম প্রমাণ করলেন—সততা কোনো আর্থিক অবস্থা বা সামাজিক মর্যাদার ওপর নির্ভর করে না; এটি আসে পরিবার থেকে, অন্তর থেকে। এমন মানুষরাই সমাজের আসল নায়ক।