রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

মতুর্জা শাহাদত সাধন, নওগাঁ :

নওগাাঁয় ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ

বিশেষ সংবাদ

নওগাঁয় সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের ভূমি অফিসের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিস থেকে দেওয়া খাজনা পরিষোধের রসিদে উল্লেখিত টাকার চেয়েও অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে অনবরত।

নওগাাঁয় ভূমি অফিসের দূর্নীতি নিয়ে দুবলহাটি ইউনিয়নের ভরাট্ট নওগাঁ গ্রামের মোজাফফর হোসেনের অভিযোগ, তার জমির খাজনা বাবদ সরকারি ভূমি উন্নয়ন কর ৯০০ টাকা পরিশোধ করে রসিদ পেয়েছেন ২৭২ টাকার। একাধিক সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ এই দুবলহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

ইউনিয়ন ভূমি অফিস| ছবি : অন্বেষণ।

সরেজমিনে গিয়ে নওগাাঁয় ভূমি অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন এবং রাসেল হোসেনের বিরুদ্ধে। খাজনা খারিজের নামে সাধারণ সেবাপ্রত্যাশীদের কাছে থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ফি।

মঙ্গলবার ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে কথা হয়, চকপ্রাসাদ গ্রামের খলিলুর রহমান নামের এক ব্যক্তির সাথে। এসময় তার সাথে কথা হলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সামান্য এক টুকরো জমি খারিজ করার জন্য এসে ফাতেমা ম্যাডামের (ভূমি কর্মকর্তা) সঙ্গে কথা হলে তিনি সব কাগজপত্র দেখে আট হাজার টাকা দাবী করলেন। পরে সাত হাজার টাকা দিয়ে কাজ করিয়ে নিলাম।

অভিযোগের তালিকা,

এমন অভিযোগের তালিকা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দুবলহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দুই কর্মকর্তা যথাক্রমে, উপসহকারী কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন এবং রাসেল হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে সেবাপ্রত্যাশীদের। ওই দুই কর্মকর্তার যোগসাজশেই ভূমি অফিসের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন সেবা গ্রহীতারা।

সেখানে দুবলহাটি ইউনিয়নের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা রাসেল হোসেন তার গ্রামের বাড়ি সরিসপুরে ব্যক্তিগত অফিস খুলে বসেছেন। জমি জমার সমস্যায় থাকা মক্কেল ধরা ও টাকা পয়সার দর কষাকষি চলে সেখানে। পরে অফিস থেকে কাজ সেরে আর্থিক লেনদেন করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অতিরিক্ত অর্থ ছাড়া ভূমি অফিস থেকে একটি কাজও হয় না। সামান্য হোল্ডিং অনুমোদন দিতেই বড়ো অঙ্কের টাকা দাবি করেন রাসেল। পরবর্তীতে আদায়কৃত টাকা ভূমি অফিসের ছালমা খাতুনের মাধ্যমে কাজ করিয়ে ভাগবাটেয়ারা করা হয়। সেক্ষেত্রে সেবাপ্রত্যাশীদের খরচের অঙ্কটাও বেড়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভূমি অফিসের এক কর্মচারী জানান, আমি বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেছি, কিন্তু এ অফিসের মতো মানুষকে হয়রানি কোথাও হতে দেখিনি। টাকা ব্যতিত একটা কাজও করেন না উপসহকারী কর্মকর্তা রাসেল হোসেন। তার এক সহযোগী আছেন প্রসেস সার্ভেয়ার ছালমা খাতুন। তাকে দিয়ে তিনি (রাসেল)সকল লেনদেন করান।

অভিযুক্ত রাসেল ও সালমা

তিনি আরো জানান, মহাদেবপুর ভূমি অফিসে চাকরি করা কালীন রাসেল ও ছালমা আপত্তিকর অবস্থায় ধরাও পড়েন। তৎকালীন ডিসি এনামুল স্যার দুজনকে দুই জায়গায় তাৎক্ষনিক বদলী করলেও কয়েক বছর পর আবার তারা একজায়গায় হয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

রাসেল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে শিকারপুর ইউনিয়নের গোয়ালী গ্রামের সাবু বলেন, গত এক মাস ধরে একটা হোল্ডিং অনুমোদনের জন্য রাসেলকে ১ হাজার টাকা দিয়েছি, কিন্তু আমার কাজটা করে দিচ্ছেন না। বিভিন্ন ব্যস্ততা দেখিয়ে কালক্ষেপণ করছেন।

একই ইউনিয়নের চকরামকালি গ্রামের বিজিবি সদস্য হাসান আলী জানান, চাকরির কারনে আমি বাইরে থাকায় হোল্ডিং করার জন্য কাগজপত্র ও এক হাজার টাকাও দিয়েছি রাসেলের কাছে, কিন্তু এখনও কাজ হয়নি। ফোন করলে বিভিন্ন কথা বলে কালক্ষেণ করছে।

উপজেলার নার্সি গ্রামের আল আমিন জানান, রাসেল অনেক আগে আমার তিন বিঘা জমি খারিজের জন্য ৪৩ হাজার টাকা নিয়েছে, কিন্তু খারিজ করে দিতে পারেনি, টাকাও ফেরত দেয়নি। পাঁচ-দশ হাজার করে টাকা ফেরত দিচ্ছে। এখনও ৯ হাজার টাকা পাবো তার কাছে। এছাড়াও চাকরির বিষয়ে এর আগে সতের লাখ টাকা নিয়ে সেই টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা এখনও দেয়নি।

ভরাট্ট নওগাঁ গ্রামের মোজাফফর হোসেন বলেন, আমার জমির খাজনার চেক কাটতে এসেছিলাম ফাতেমা খাতুনের কাছে। তিনি এক হাজার টাকা দাবী করলে ৯০০ টাকা দিয়েছি। কিন্তু ২৭২ টাকার চেক পেয়েছি।

মাতাসাগর গ্রামের মহির উদ্দীন নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, এখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। সামন্য একটা খারিজ করতে আসলে সরকারি ফি ১১৫০ টাকার জায়গায় সেখানে আট থেকে নয় হাজার টাকা নেন তারা।

উপসহকারী ফাতেমা খাতুন বলেন,

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী ফাতেমা খাতুন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ অসত্য। যারা অভিযোগ করেছে, তাদের সামনা সামনি করুন।

অভিযোগের বিষয়ে উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা রাসেল হোসেন ফোনে কথা বলতে রাজী হননি। পরবর্তীতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে দুবলহাটি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন , অতিরিক্ত টাকা নেয়ার ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান,

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম রবিন শীষ বলেন, ভূমি অফিসে সরকারি ফির বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখব।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

এই সম্পর্কিত আরও পড়ুন

চিত্রনায়িকা পরীমনির সাবেক স্বামী সৌরভ গ্রেপ্তার

চিত্রনায়িকা পরীমনির সাবেক স্বামী ফেরদৌস কবির সৌরভকে (২৯) গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) রাজধানীর বসুন্ধরা রেসিডেন্সিয়াল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জানা...

ধর্ষণ মামলায় জামিন পেলেন টিকটকার প্রিন্স মামুন

লায়লা আক্তার ফারহাদের দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় টিকটকার আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুন জামিন পেয়েছেন। মঙ্গলবার (১৮ ফিব্রুয়ারি) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন...

জনপ্রিয়

অপরাধ

বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব: শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের স্ত্রী

চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের গ্রেফতারের পর তার স্ত্রী প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, কাড়ি, কাড়ি, "বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব।" যারা এই...

বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব: শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের স্ত্রী

চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের গ্রেফতারের পর তার স্ত্রী প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, কাড়ি, কাড়ি, "বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে...

স্বাধীনতা দিবসে কুচকাওয়াজ হচ্ছে না: সিনিয়র স্বরাষ্ট্র সচিব

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। তিনি...

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে শিশু ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে শিশু ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফিরোজ মিয়াকে...