গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে দুর্বৃত্তদের চালানো গুলিতে গুরতর আহত হন ফেনীর ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মো: নাহিদুর রহমান। তিনি জানান, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, আমার অন্তরে সুখ আছে কিন্তু আমি চোখে দেখতে পারছি না।
তিনি বলেন, গত ৪ আগস্ট লং মার্চ কর্মসূচিতে নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এ সময় নাহিদ ফেনীর মহিপাল সার্কিট হাউস রোডে অন্তত ৪ জনকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ আহত ছাত্র-জনতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালেও পাঠান তিনি। এরপর থেকে ফেনী ছিল নিস্তব্ধ। এরপর ৫ আগস্ট সকালে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে বিজয় মিছিল নিয়ে শহরের দিকে যায় ফেনীবাসী। মিছিলটি শহরের খেজুর চত্বরে গেলে লাভ মার্কেটের দিক থেকে হেলমেট পরা ৩০ থেতে ৩৫ জন সন্ত্রাসী তাদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে সবার গুলিবিদ্ধ হন নাহিদ।
তিনি আরও বলেন, আমি ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলের সামনে ছিলাম। আমার হাতে বাংলাদেশের একটি পতাকা ছিল। হঠাৎ করে হেলমেট পরা ৩০ থেকে ৩৫ জন সন্ত্রাসী গুলি চালানো শুরু করে। প্রথম গুলিটা আমার চোখে লাগে। এরপরর আমি আর কিছু দেখতে পারছিলাম না। আমি চোখে হাত দিয়ে বসে পড়ি। তখন তারা আমার সারা শরীরে গুলি করে।
নিজের জীবন নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে নাহিদ বলেন, আমি পরিবারের বড় ছেলে। আমার ওপর সংসারের অনেক দায়িত্ব। এতদিন পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজও করতাম। এখন আমার চোখ আর কোন দিন ভালো হবে কিনা ডাক্তাররা কিছুই বলতে পারছেন না। আমার স্বপ্ন ছিল আমি সরকারি চাকরি করব। কিন্তু আমি এখন এক চোখ দিয়ে কিছু করতে পারব কিনা
আমি জানি না।
নাহিদের বাবা বাহার মিয়া একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। যেই বড় ছেলে পরিবারের হাল ধরবে ভেবে তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন সেই ছেলে এখন চোখ হারানোর শঙ্কায়। চিকিৎসার খরচ বহনের সাধ্যও নেই তার বাবার। যা চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত করে দিয়েছে নাহিদের পুরো পরিবারকে।
তিনি গণমাধ্যমে বলেন, আমি বেসরকারি ছোট একটা ফার্মে চাকরি করি। আশা ছিল আমার পরে বড় ছেলে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু সে তো নিজেই এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায়। আমর ছেলেটার চোখটা যদি ভালো হয় তাহলে অন্তত সে কিছু করে খেতে পারবে। এ জন্য ছেলেকে নিয়ে বড় হাসপাতালে এসেছি। দেখি এখন আল্লাহ তার কপালে কি রেখেছে। যে কোনো মূল্যে নাহিদ তার চোখ ফিরে পাবে এটাই এখন একমাত্র চাওয়া এই পরিবারের।