লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ডাকাতিয়া, মেঘনার তীরবর্তী ও বেড়িবাঁধ এলাকায় নামছে বন্যার পানি। মেঘনার জোয়ার ও ভারি বর্ষণের কারণে সৃষ্ট এই বন্যার পানি যত কমছে, ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। স্রোতে ভেঙে গেছে বিভিন্ন গ্রামের রাস্তা ও সড়ক। অনেক সড়ক এখনও পানির নিচে রয়েছে। কিছু বাড়িঘরেও পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন অনেক বাসিন্দারা।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: শাহেদ আরমানের নেতৃত্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, পুলিশ, রেডক্রিসেন্ট, সচেতন নাগরিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যক্তিরা ডাকাতিয়া নদী সংযোগ খালে অবৈধ বাঁধগুলো কেঁটে দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীর জোয়ার ও গত ১৪ দিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে রায়পুর উপজেলায় বন্যা শুরু হয়েছে। শনিবার সকাল পর্যন্ত মেঘনা নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার কমে বর্তমানে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে।
এরই মধ্যে অঞ্চলগুলোতে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তলিয়ে যাওয়া বিভিন্ন সড়ক ও রাস্তা-ঘাট থেকে পানি সরে যাওয়ায় ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। এছাড়াও নিরাপত্তার স্বার্থে এখনও বেশ কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) থেকে বন্যা দেখা দেওয়ার কারণে পৌরসভার পশ্চিম কাঞ্চনপুর, দেনায়েতপুরসহ ৯টি ওয়ার্ড, উপজেলার পুর্বাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নের চরপাতা, কেরোয়া, সোনাপুর, বামনী এবং মেঘনা উপকূলীয় ৪টি ইউনিয়নসহ ১০০ টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার বন্যার পানি বেড়ে গিয়ে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে জোয়ারের পানির বেগ কমায় ও থেমে থেমে বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে পানি কমতে থাকে। শনিবার সকাল থেকে বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে।
এর ফলে বেশিরভাগ বাড়ি-ঘর থেকে পানি নেমে যায়। তবে কয়েকটি বাড়ি-ঘরে এখনো অনেকে পানিবন্দি রয়েছেন। উত্তর ও দক্ষিণ চরআবাবিল এবং উত্তর ও দক্ষিন চরবংশী ইউপির সংলগ্ন মেঘনা নদীর বেশ কয়েকটি স্থানসহ পৌরসভার বেশিরভাগ সড়ক সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। এ কারণে এসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব এলাকার পানি ধীরগতিতে নামছে। পানির স্রোতে শহরের টিএন্ডটি ও রুস্তম আলী কলেজ এলাকার সড়কের পিচ উঠে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: নাহিদ উজ জামান খান জানান, সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মেঘনার তীরবর্তী ও বেড়িবাঁধ এলাকায় নামছে বন্যার পানি। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার নিচ পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে নদীর লক্ষ্মীপুর পয়েন্টে পানির সমতল রয়েছে ৫.৫৪ মিটার। এর ফলে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: ইমরান খান জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। কত কিলোমিটার সড়ক এবং কয়টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে খবর একদিন পর দেওয়া যাবে। পানিবন্দিদের শুকনা খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে।
কারও পানির সংকট নেই। এর কারণ, কোনও নলকূপ পানিতে তলিয়ে যায়নি। বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। বাড়ি-ঘর থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। ভেঙে যাওয়া সড়কগুলো মেরামত করে যান চলাচলের চেষ্টা করা হবে।