বগুড়ার শেরপুরে ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: বেলাল হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে বিদ্যালয় চত্বরে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ক্ষমতার জোরে ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন সুঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: মনিরুজ্জামান জিন্নাহ।
সে সময় প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেনের যোগ শাজসে গত ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক, নিরাপত্তাকর্মী, ল্যাব সহকারী, অফিস সহায়ক ও আয়া পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় ৬৩ লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করার কথা বলে গ্রহন করেন। কিন্তু উক্ত টাকার একটি টাকাও বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজে ব্যয় না করে সব টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা।
বিদ্যালয়ের নামে ১’শ শতক পুকুরের মাটি বিক্রি এবং লিজের টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা না দিয়ে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যৌথ ভাবে আত্মসাৎ করেন। করোনা কালীন সময়ে এসএসসি-২০২১ পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ ফি এবং কেন্দ্র ফি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী কর্তৃক ফেরত প্রদানের নির্দেশ থাকলেও সেই টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত না দিয়ে প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন।
গত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছর পিবিজিএইচআই স্কীম এর মাধ্যমে ফুলজোড় বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরে ৫ লক্ষ লাখ টাকা অনুদান প্রাপ্ত হন। তার আংশিক ব্যয় করে অবশিষ্ট সব টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড দেওয়ার জন্য গত ২০২০ সালে ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে নিয়ে প্রায় ৫২ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করা সহ নানা প্রকার অনিয়ম করেছেন।
ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে ক্যম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন।
প্রশাসন ও এলাকাবাসীর কাছে দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, এ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের যত টাকা লুট করা হয়েছে সকল টাকা বিদ্যালয় ফান্ডে জমা দিতে হবে এবং যারা এসব কাজের সঙ্গে জরিত রয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করতে হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দলোন চালিয়ে যাবে বলেও হুসিয়ারী দেন।
এ বিষয়ে ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান জিন্নাহ জানান, আমার সময় যে নিয়োগগুলো দেওয়া হয় তা সম্পুর্ন বিধি মোতাবেক দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও টাকা আত্মসাতের মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: বেলাল হোসেনের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সুমন জিহাদী জানান, ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়টি আমি শুনেছি। এভাবে জোর করে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা যাবেনা।
শিক্ষার্থীরা একটি লিখিত অভিযোগ দিলে একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করে পরবর্তীতে দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত এলাকাবাসীকে পরিবেশ শান্ত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।