সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ক্লাসরুমের ভেতরে এক শিক্ষার্থীকে গুলি করেছেন শিক্ষক। সোমবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে তৃতীয় বর্ষের ক্লাস চলাকালীন সময়ে এমন ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত কলেজে উপস্থিত হয়ে ১টি পিস্তল জব্দ করেছে। গুলিবিদ্ধ মো: আরিফিন আমিন তমাল ওই কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত শিক্ষক শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. মো: রায়হান উদ্দিন। তিনি সিরাজগঞ্জ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো: আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।
এদিকে শিক্ষকের গুলিতে ছাত্র আহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করছেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কলেজে প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন।
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. রায়হান উদ্দিন মাঝেমধ্যেই নিজের নামে লাইসেন্স করা পিস্তল নিয়ে ক্যাম্পাস ও ক্লাসে আসেন। সোমবার তিনি ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অতিরিক্ত ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকার আদেশ দেন। আগে থেকেই তিনি শ্রেণিকক্ষে এসে বসে ছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ক্লাসে অংশ নিতে আপত্তি জানান। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে ওই শিক্ষকের বাগবিতণ্ডা হয়।
এ ঘটনায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফিন আমিন তমালের ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয় শিক্ষক রায়হান। একপর্যায়ে টেবিলের ওপর রাখা পিস্তল দিয়ে তমালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন তিনি। এসময় গুলিটি তমালের পকেটের রাখা মোবাইলে লাগে। সাথে সাথে ক্লাসে উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের ওপর চড়াও হন। এ সময়ে শিক্ষক রায়হান দৌড়ে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা কলেজ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় অভিযুক্ত শিক্ষককে বহিস্কার ও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ডা. আমিরুল হোসেন চৌধুরী জানান, অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের মেজাজ উগ্র। শিক্ষার্থীদের সাথে তিনি প্রায়ই খারাপ আচরণ করেন। ক্যাম্পাস ও ক্লাসে পিস্তল নিয়ে আসায় শিক্ষার্থীরা প্রায়ই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। আমি তার বদলির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে বেশ কয়েকটি চিঠিও দিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
সোমবর অতিরিক্ত ক্লাসে আসতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়েছে। বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আরিফিন নামের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করেন তিনি। এ ঘটনায় আমি সত্যিই হতবাক হয়েছি। আমি এখন অফিসের কাজে ঢাকায় রয়েছি। তবে কলেজে ফিরে শিক্ষক রায়হানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবারও অধিদপ্তরে চিঠি পাঠাব।
সিরাজগঞ্জে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীকে গুলি করেছেন শিক্ষক, এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের খবর দেওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
পুলিশ সুপার (এসপি) মো: আরিফুর রহমান বলেন, আমরা কলেজে উপস্থিত হয়ে পিস্তলটি জব্দ করেছি। এ পিস্তলটি বৈধ না অবৈধ, তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এ মুহূর্তে অভিযুক্ত শিক্ষককে কলেজে নিরাপদে রাখা হয়েছে। তাকে আটকের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।