১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি করে জেলেরা পান ১৩৫০ টাকা, সেই ইলিশ সাধারণ ভোক্তা কেনেন ২০২৫ টাকায়। বরিশালের বেসরকারি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা গোপাল ঘোষ। শনিবার (২১ আগস্ট) সকালে নগরীরর বাংলাবাজারে এসেছিলেন ইলিশ কিনতে। বাজারে ৫০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশ দেখে একটি ইলিশের দাম জানতে চাইলেন। মাছ বিক্রেতা প্রতি কেজি ইলিশের দাম হাঁকলেন ১৬’শ টাকা। দাম শুনে ক্রেতার চোখ কপালে ওঠার দশা। কিন্তু কিছু না বলে তিনি অন্য দোকানের দিকে উঁকি দেন। এরপর নীরবে হেঁটে চলে গেলেন। মাছ বিক্রেতা পেছন থেকে তাকে ডেকে বলছিলেন, কী,মাছের দাম কইবেন না!
প্রদীপ বিশ্বাস আক্ষেপ বলেন, বাড়িতে বাচ্চারা ইলিশ খেতে প্রচণ্ড বায়না ধরেছে। কিন্তু ইলিশের দাম শুনে আর সাহস হলো না। মৌসুমেও যদি ইলিশের এত দাম হয়, তাহলে আমরা সাধরণ মানুষ মাছ কিনবে কীভাবে? আর কেনই বা এখনও এত দাম?
ভরা মৌসুমে ইলিশের দাম নিয়ে গোপাল ঘোষের মতোই দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষদের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ৫ থেকে ৭ বছর আগেও এই অঞ্চলে ভরা মৌসুমে ১ কেজি ওজনের নিচের ইলিশ খুচরা বাজারে ৫০০/৮০০ টাকায় বিক্রি হতো। আর ১ কেজির ওপরের ইলিশগুলো ১ হাজার থেকে ১ ২০০’শ টাকায় বিক্রি হতো।
সাধারণ ক্রেতাদের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সরজমিনে বাজারে এসে জানা গেলো, নদী-সাগর থেকে সংগ্রহ করা ইলিশ খুচরা বাজারে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে ৪ দফায় হাতবদল হয়। যার প্রতি ধাপে-ধাপে বাড়ে ইলিশের দাম। এই ধাপগুলোকে সিন্ডিকেট বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরগুনার পাথরঘাটার এক জেলে ১ কেজি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি করে ১ হাজার ৩৫০ টাকা পান। সেই ইলিশ ক্রেতাদের কিনতে হয় ২ হাজার ২৫ টাকায়। এই অতিরিক্ত ৬৭৫ টাকা মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে যায়।
পাথরঘাটা মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আলম মোল্লা বলেন, ৪টি ধাপের প্রতিটিতেই ব্যবসা জড়িত। আবার এখানে অনেক রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যাক্তির স্বার্থও জড়িয়ে থাকে। এই কারণে কেউ এককভাবে চাইলেইও এটা কমাতে পারেন না। এ ছাড়াও ইলিশ রাজকীয় মাছ, তাই সব সময়ই ইলেশের বাজার ঊর্ধ্বমুখী রাখেন বড় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্র দেশের ২য় বৃহত্তম মৎস্যবন্দর। বিএফডিসি (বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন) পরিচালিত এসব মৎস্যবন্দরের জেলে, আড়তদার ও পাইকারী ব্যবসয়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলেরা যখন নদী-সাগর ইলিশ মাছ ধরে ট্রলারে করে বন্দরে আসেন, তখন তারা নির্ধারিত আড়তে এইসব মাছ বিক্রি করার জন্য দেন। পরে আড়তদারেরা এসব মাছ স্থানীয় পাইকারী ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন বলে জানা যায়।