ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী অন্তত ১৯টি গ্রাম গত কয়েকদিনে প্লাবিত হয়েছিল। তবে ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করেছে। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো পানিবন্দী প্রায় ৫১১টি পরিবারের দুই হাজারের বেশি মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, ভারতের উজানে টানা বৃষ্টির ফলে হাওড়া নদীসহ আখাউড়ার বিভিন্ন খাল-নদীতে হঠাৎ করে পানি বেড়ে যায়। এর ফলে শনিবার রাত থেকে দক্ষিণ, মোগড়া ও মনিয়ন্দ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ঢলের পানি ঢুকে পড়ে।
গত ২৪ ঘণ্টায় হাওড়া নদীর ভারত সীমান্ত এলাকায় পানির উচ্চতা ১২৯ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গঙ্গাসাগর অংশে পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান বলেন, আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টায় হাওড়া নদীর সীমান্ত অংশে পানির উচ্চতা ছিল ৯.৯৩ মিটার, যা বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার নিচে। ফলে পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্বস্তিদায়ক।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি এম রাশেদুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে ১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা মাঠে আছি। সবাইকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যদি আজ আর বৃষ্টি না হয়, তাহলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।”
পাহাড়ি ঢলের পানিতে দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিকাপুর, বীরচন্দ্রপুর, আবদুল্লাহপুর, কেন্দুয়া, বঙ্গেরচর; মোগড়া ইউনিয়নের বাউতলা, উমেদপুর, সেনারবাদী, জয়নগর, কলাপাড়া, রাজেন্দ্রপুর, আওড়ার চর ও ছয়গরিয়া এবং মনিয়ন্দ ইউনিয়নের ইটনা, আইড়ল, টনকি, তুলাইশিমুল, শোনলহগর ও নতুনপাড়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
অনেক এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে, ফসলি জমিতে পানি উঠে গেছে, আর কিছু ঘরবাড়িও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঢলের পানি রাতভর ঢুকে সোমবার সকাল নাগাদ কিছুটা কমলেও সকালে আবার বৃষ্টি শুরু হলে পানি ফের বাড়তে থাকে। এতে দুর্ভোগও বাড়ে।
আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টের পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার জানান, “পানির প্রভাব সীমান্ত যাত্রী পারাপারে তেমন কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি। ব্যবসা-বাণিজ্যও স্বাভাবিক রয়েছে।”
আখাউড়া উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ৫১১টি পরিবারে প্রায় ২ হাজার ৪৪ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করছেন। তাঁদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আরও বৃষ্টি হলে নতুন করে পানি বাড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাই স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে এবং পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে বলে জানানো হয়েছে।