বগুড়ার শেরপুরে এবার ধান কাটা ও নবান্ন উৎসবের চিরচেনা আমেজ উধাও। রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতির পর কৃষকদের দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে আলু চাষ ঘিরেও। সার সংকটের পূর্বাভাস এই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
চলতি মাসের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় মোস্তার প্রভাবে টানা দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে আমন ধানের ফলনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এবং বাতাসে ধান গাছ নুইয়ে পড়ে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ধানগাছে পচন ধরেছে এবং বেশিরভাগ ধান চিঁটা হয়ে গেছে।
গাড়িদহ ইউনিয়নের মাগুরগাড়ি এলাকার কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, তিনি ৩৪ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে ৮ বিঘা জমির ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে, পরে তা গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে হয়েছে। অনেক কষ্টে কিছু ধান ঘরে তুললেও ফলন পেয়েছেন বিঘাপ্রতি মাত্র ৬ মণ।
শারীরিক প্রতিবন্ধী গোলাম নবী ২২ শতক বর্গা জমিতে চাষ করে পুরো জমির ধানই হারিয়েছেন। দেলোয়ার হোসেনের ৭ বিঘা জমির মধ্যে আড়াই বিঘা এবং আব্দুস সাত্তারের সাড়ে ৩ বিঘা জমির মধ্যে ৮ শতক জমির ধান নষ্ট হয়েছে।
আমন ধানে লোকসানের মুখে কৃষকেরা এবার আলু চাষ নিয়েও শঙ্কিত। সাধারণত আমন ধান কাটার পরপরই আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু এবার আমনের জমিতে এখনো পানি জমে থাকায় জমিগুলো আলু চাষের উপযোগী করতে আরও অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে। এতে করে আলু চাষ এক মাস পিছিয়ে যাবে এবং অতিরিক্ত কুয়াশা, মাঘ মাসের প্রখর রোদসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঝুঁকির মুখে ফেলবে।
কৃষকেরা অভিযোগ করছেন, বর্তমানে সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ডিলার, সাব-ডিলার, খুচরা বিক্রেতার দোকানসহ কোথাও সার পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভরা মৌসুমে সারের যোগান দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে, এতে আলু চাষে বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার জানান, এ বছর আমন মৌসুমে ২২ হাজার হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে ২২ হাজার ৪৬০ হেক্টর। এরমধ্যে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমির ধান হেলে পড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবারের আলু চাষ পিছিয়েছে। তবে সারের কোনো কমতি নেই বলে তিনি আশ্বাস দেন।
তিনি আরও জানান, কৃষকেরা টিএসপি সার কম পেলেও তাদের টিএসপির পরিবর্তে ডিএপি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং বাজারে ডিএপি সারের কোনো ঘাটতি নেই বলেও জানান তিনি।


