দীর্ঘ এক দশক পর আবারও নির্বাচন কমিশনের তালিকাভুক্ত দল হিসেবে জায়গা পেল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তাদের পুরোনো দাঁড়িপাল্লা প্রতীকও ফিরে পেল তারা।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহালের বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে ইসি যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, তা এখন বাতিল করা হলো।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নিজস্ব প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আর কোনও বাধা রইলো না।
এর আগে, চলতি বছরের ১ জুন হাইকোর্টের দেওয়া জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার রায় বাতিল করেন আপিল বিভাগ। একই আদেশে দলটির প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন দেয় ইসি। কিন্তু ২০১৩ সালে হাইকোর্ট রায় দিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। পরে জামায়াত আপিল করলে সেই প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়ে পড়ে। আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের নভেম্বরে মামলাটি ‘ডিফল্ট’-এর কারণে খারিজ করে। তবে পরবর্তী সময়ে দেরির জন্য মার্জনা চেয়ে জামায়াত নতুন আবেদন করে, যা গ্রহণ করেন আপিল বিভাগ।
চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ১ জুন আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেয় এবং ইসিকে নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়টি নির্ধারণে স্বাধীনতা দেয়। এরপর ৪ জুন ইসি এক বৈঠকে জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
জামায়াতে ইসলামী পুরনো দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পেতে আলাদাভাবে আবেদন করেছিল। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত দেয় যে, ২০১৩ সালে দলটি নিবন্ধিত থাকাকালে যে প্রতীক ব্যবহার করত, সেটিই আবারও দেওয়া হচ্ছে।
কমিশনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ‘স্ট্যাটাসকো এনটে’ অর্থাৎ পূর্ববর্তী অবস্থা পুনর্বহালের নীতির ভিত্তিতে প্রতীক ফেরানো হয়েছে। এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধিবিধানও এতে বিবেচনায় নেওয়া হয়।
জামায়াতে ইসলামীকে কেন্দ্র করে দেশে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্ক চলমান। ১৯৭১ সালের ভূমিকার প্রশ্নে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আবারও নিবন্ধন পাওয়ার মাধ্যমে দলটি এখন রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়ভাবে ফেরার সুযোগ পেল।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত বছরের আগস্টে জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ওই নিষেধাজ্ঞাও বাতিল করা হয়।
নতুন করে নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার ফলে দেশের রাজনীতিতে দলটির ভূমিকা ও অবস্থান নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।