প্রশিক্ষণের নাম করে এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা থেকে ছুটি নিয়ে অন্য আরেকটি কলেজে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে মো: বায়জিদ হোসেন নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগসাজসে ৫ মাস ধরে বেতনও উত্তোলন করে আসছিলেন তিনি।
অভিযুক্ত বায়জিদ হোসেন কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক। তিনি ছুটি নিয়ে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্মরত আছেন। দুটি প্রতিষ্ঠানে খোঁজ-খবর নিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওয়েবসাইটে ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের ছবিসহ কর্মরত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, বায়জিদ হোসেন এনটিআরসিএর ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে গত ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে মাদ্রাসার আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি এমপিওভুক্ত হন। ২০২৪ জানুয়ারি মাস থেকে তিনি মাদ্রাসায় অনুপস্থিত রয়েছেন। তবে মাদ্রাসা থেকে তিনি ঠিকই নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন।
ওই মাদ্রাসার আইসিটি বিষয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক মো: আরিফুল ইসলাম আকাশ জানান, এ বিষয়ে অন্য কোনো শিক্ষক আছেন কি না সে ব্যাপারে আমি সঠিক জানি না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখ থেকে আমি নিয়মিত ক্লাস নিয়ে আসছি। এ সময়ের মধ্যে আমি আইসিটি বিষয়ের অন্য কোনো শিক্ষক দেখতে পাইনি।
মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক বায়জিদ হোসেন অধ্যক্ষ নূর বখতের সাথে লিয়াজো করে একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বেতনও উত্তোলন করে আসছেন। হাজিরা খাতা এবং বেতন বিলের কাগজপত্রে কীভাবে বায়জিদ হোসেনের স্বাক্ষর দেওয়া হয় সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না তারা।
মাদ্রাসার শিক্ষক প্রতিনিধি (টিআর) মো: মাজেদুল ইসলাম জানান, আইসিটি শিক্ষক বায়জিদ হোসেন বেশ কয়েক মাস হলো মাদ্রাসায় আসেন না। শুনেছি তিনি নাকি ট্রেনিংয়ে আছেন। তবে কিসের ট্রেনিং সে বিষয়ে কিছুই জানি না। তিনি প্রশিক্ষণের কথা বলে ছুটি নিয়েছেন।
সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের আইসিটি বিভাগের প্রধান মো: সারওয়ারর্দী আলম জানান, এর আগে বায়জিদ আমাদের স্কুল শাখার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে মাদ্রাসায় চাকরি হওয়ার পর তিনি ইস্তফা দেন। তাকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে থাকার জন্য প্রস্তাব দিলে তিনি কলেজের প্রভাষক পদে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে ৫ মাস আগে বায়জিদকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরসাথে তার স্ত্রীকেও চাকরি দেওয়া হয়। তখন থেকে বায়জিদ আমাদের কলেজে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি এখনো ওই মাদ্রাসায় কর্মরত আছেন সে ব্যাপারে আমাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রভাষক বায়জিদ হোসেন জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ স্যারের সাথে কথা বলে আমি আগামী ৩০ জুন (রবিবার) পর্যন্ত প্রশিক্ষণকালীন ছুটি নিয়েছি। আমি যেখানে রয়েছি সেটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান নয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষক হয়ে অন্য আরেকটি কলেজে নিয়োগ নিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন উত্তোলন কতটা বিধিসম্মত, এমন প্রশ্নের জবাবে বায়জিদ ইসলাম দাবি করেন, ১ জুন (শনিবার) আলিয়া মাদ্রাসায় ইস্তফা দিয়েছেন। এ যাবৎ তিনি যে বেতন উত্তোলন করেছেন, সেটি ফেরত দিতেও প্রস্তুত রয়েছেন বায়জিদ।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা র অধ্যক্ষ মো: মাওলানা নূর বখ্ত জানান, বায়েজিদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত প্রশিক্ষণের কথা বলে ছুটি নিয়েছেন। এরপর মাদ্রাসা য় যোগদান না করলে বয়জিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক ও মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সভাপতি মো: সাইদুল আরিফ জানান, এটা গুরুতর অনিয়ম। তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।