ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে পাঁচ বছরের দীর্ঘ অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছে অপহৃত স্কুলছাত্র সামাউন আলী (২০)। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতের এক আবেগঘন মুহূর্তে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
জানা গেছে, সামাউন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের গোগবস্তি গ্রামের বাসিন্দা। প্রায় পাঁচ বছর আগে, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে যায় তারই চাচাতো ভাই জমিরুল ইসলাম মিঠুন। এরপর থেকেই সামাউনের সঙ্গে পরিবারের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ছেলের খোঁজে দিনের পর দিন দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো সুরাহা না পেয়ে অবশেষে সাত মাস আগে আব্দুস সোবহান ঠাকুরগাঁও আদালতে মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্ত করা হয় সামাউনের চাচা আব্দুল খালেক এবং চাচাতো ভাই মিঠুনকে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এতদিন মেলেনি সামাউনের কোনো সন্ধান।
শেষমেশ গতকাল রাতে ঠাকুরগাঁও শহর থেকে এক ফোন আসে সামাউনের বাবার কাছে। অপর প্রান্তে ছেলের কণ্ঠ শুনে আবেগে ভেঙে পড়েন তিনি। এরপর পুলিশের সহযোগিতায় সামাউনকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়।
উদ্ধারের পর সামাউন জানায়, অপহরণের পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নরসিংদী জেলার একটি গুদামে। সেখানে কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে উপার্জিত অর্থ অন্যরা ছিনিয়ে নিত। দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে কেটেছে তার সময়। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় কোথায় আছে, কেমন আছে—সবই যেন স্মৃতি থেকে মুছে গিয়েছিল।
সামাউনের ফিরে আসার খবরে গোগবস্তি গ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা। বালিয়াডাঙ্গী থানায় ভিড় জমিয়েছে গ্রামবাসী। সবার চোখেমুখে এখন একটিই ভাষা—আশার আলো ফিরে পাওয়ার উচ্ছ্বাস।
বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) দিবাকর অধিকারী জানান, মামলার আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালতের অনুমতি নিয়ে সামাউনকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
পাঁচ বছরের দীর্ঘ যন্ত্রণা শেষে সামাউনকে ফিরে পেয়ে যেন আবার নতুন জীবন পেয়েছে তার পরিবার। গোগবস্তি গ্রামে আজ উচ্ছ্বাস আর আনন্দের এক উৎসবমুখর পরিবেশ।