রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জানিয়েছেন, ‘আমি শুনেছি যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে আমার কাছে এর কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই’। তিনি বলেন, ‘পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার অনেক চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি।
দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মো: মতিউর রহমান চৌধুরীর সাথে আলাপকালে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন তাকে এসব কথা বলেছেন। কথোপকথনটি রবিবার (২০ অক্টোবর) পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ এ প্রকাশিত হয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সংবিধানের ৫৭(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদ তখনই শূন্য হইবে, যদি তিনি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র প্রদান করেন।
কথোপকথনে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেছেন, গত ৫ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে বঙ্গভবনে ফোন আসে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। ফোনে বলা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বঙ্গভবনে আসবেন। এটা শুনেই বঙ্গভবনে প্রস্তুতি শুরু হলো। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো প্রধানমন্ত্রী আসছেন না।
তিনি আরো বলেছেন, চারদিকে শুধু অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে কিছুই জানি না। আমি তো আর গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল মো: আদিলকে বললাম খোঁজ-খবর নিতে। তার কাছেও কোনও খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো রকমের খবর নেই।
এর একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার সংবাদ পান জানিয়ে বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) আমাকে কিছুই বলে গেলেন না। যা সত্য সেটাই আপনাকে (মতিউর রহমানকে) বললাম। যাই হোক, যখন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বঙ্গভবনে আসলেন তখন জানার চেষ্টা করেছি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না? একই জবাব। শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। মনে হয় সে জানানোর সময় পাননি।
এ বিষয়টি নিয়ে মতিউর রহমানকে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, এ নিয়ে বিতর্কের কোনো কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে চলে গেছেন এটাই সত্য। তারপরও কখনো যেন এই প্রশ্ন না উঠে সেই জন্য সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়েছি।
তার পাঠানো রেফারেন্সের প্রেক্ষিতে গত ৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবা) তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো: ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ মতামত দিয়েছেন।
এতে জানানো হয়, সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করার জন্য এবং নির্বাহী বিভাগ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে ও প্রেসিডেন্টকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাদের শপথ গ্রহণের অনুমতি দেয়া যেতে পারে।