বগুড়ার শেরপুরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় গৃহীত প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকার একাধিক প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ, বাস্তবে এগুলোর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে পুরো বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরেও শেরপুর পৌরসভার অনুকূলে টিআর কর্মসূচির আওতায় পাঁচটি প্রকল্পের জন্য মোট ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, শেরপুর পৌর শিশু পার্ক সংস্কার (৪ লাখ টাকা), উপজেলা পরিষদ টেনিস কোর্ট সংলগ্ন ওয়াশরুম ও চেঞ্জরুম নির্মাণ (৩ লাখ টাকা), মডেল মসজিদেও চেয়ার ক্রয় ও দান বাক্স নির্মাণ (২ লাখ ১৫ হাজার টাকা), শেরপুর শিল্পকলা একাডেমি সংস্কার (১ লাখ ১৫ হাজার টাকা), উপজেলা পরিষদের হলরুম সংস্কার ও আসবাবপত্র ক্রয় (১ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৫ টাকা)।
একই অর্থবছরে এডিপির আওতায় “শেরপুর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির বাউন্ডারী ওয়াল সংস্কার করণ” শিরোনামে আরও একটি প্রকল্পের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মডেল মসজিদের কাজ এবং শিশু পার্কের আংশিক কাজ ছাড়া টেনিস কোর্টসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলোর কোনো কাজই হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারী প্রকল্পগুলো অনুমোদন হলেও কাজ না করেই সম্পূর্ণ অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো শিল্পকলা একাডেমিকে নিয়ে। শেরপুরে শিল্পকলা একাডেমির কোনো নিজস্ব ভবনই নেই। অথচ দুটি ভিন্ন কর্মসূচিতে শুধুমাত্র শিল্পকলা একাডেমির নামেই মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকার প্রকল্প দেখানো হয়েছে, যার কোনো বাস্তব অস্তিত্ব মেলেনি।
শেরপুরের সাংস্কৃতিক কর্মীরাও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাংস্কৃতিক সংগঠন ভবের হাটের সভাপতি মো. মোজাফর আলী এবং সরমালিকার পরিচালক আশরাফুল আলম রিপন উভয়েই জানান, দীর্ঘদিন ধরে শেরপুরে শিল্পকলা একাডেমির কোনো কার্যক্রম বা নির্দিষ্ট ভবন নেই। তারা একটি কার্যকরী কমিটি গঠনের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার দাবি জানান।
অন্যদিকে, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও শিল্পকলা একাডেমির দুটি প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা জানান, সমাজসেবা ভবনে শিল্পকলা একাডেমির জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে সংস্কার কাজ চলছে এবং বাদ্যযন্ত্রের জন্য অর্ডার দেওয়া হয়েছে।
এই অনিয়ম প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্যে ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। চারটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বলেন, “প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সময় না থাকায় চারটি প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন করে ব্যাংক ড্রাফট আকারে রাখা হয়েছে। কাজগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল জব্বার ২০২৪ অর্থবছরের ভিন্ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করলেও ২০২৪-২০১৫ অর্থবছরের এই প্রকল্পগুলো নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
সার্বিক বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খান সাম্প্রতিক অর্থবছরের প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, “গত ২৪-২৫ অর্থবছরে টিআর-কাবিখা খাতে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার বেশি বরাদ্দ দিয়ে আমরা প্রায় সাতটি প্রকল্প গ্রহণ করি। সেই প্রকল্পগুলোর কাজ বৃষ্টির কারনে বিলম্ব হলেও দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।”