সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

মর্তুজা শাহাদত সাধন, নওগাঁ :

নওগাঁর আত্রাই ও ছোট যমুনার ভাঙনে পানিবন্দি আড়াই হাজার পরিবার

বিশেষ সংবাদ

নওগাঁর আত্রাই ও ছোট যমুনা ভাঙনে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বুধবার সকালে নওগাঁর রাণীনগরে ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি ও কৃষ্ণপুর নামক স্থানের বেরিবাঁধ এবং মঙ্গলবার মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর উভয় তীরের ছয় স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত আড়াই হাজার পরিবার। এরইমধ্যে ভাঙনে তলিয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কয়েক হাজার বিঘা জমির আউশ ও আমন ধান। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ।

ছবি : অন্বেষণ

সরেজমিনে রাণীনগর গিয়ে জানা যায়, কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ছোট যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছিল। এতে আতঙ্কে ছিলেন বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। এরই মধ্যে বুধবার ভোররাতে উপজেলার গোনা ইউনিয়নের নান্দাইবাড়ি-মালঞ্চি মাদ্রাসা সংলগ্ন এবং মালঞ্চি-কৃষ্ণপুর ভাটা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। ফলে প্লাবিত হয় বেড়িবাঁধ এলাকার নান্দাইবাড়ি, মালঞ্চি ও কৃষ্ণপুর তিন গ্রাম এবং ভেঙেছে মালঞ্চি মাদ্রাসার একটি দেওয়াল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েন তিন গ্রামের প্রায় ৯শ’ পরিবার।

নান্দাইবাড়ি গ্রামের ফারুক ও একই এলাকার এছাহক আলী বলেন, সকাল হওয়ার আগে আমার ঘরের ভিতর হাটু পানি হয়ে যায়। পুকুরে গিয়ে দেখি সব মাছ ভেসে গেছে। এতে আমার প্রায় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। একই এলাকার এছাহক আলী জানান, বেড়িবাঁধ ভাঙনে তার দুইটি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। প্লাবিত হয়েছে ফসল, সবজির ক্ষেতসহ বাড়িঘর।

তারা আরও বলেন, প্রতি বছরই এই বেড়িবাঁধ ভাঙে। নাম মাত্র করা হয় মেরামত। এতে করে প্রতি বছরই তিন গ্রামের মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। তারা বলছেন, গত বছর এবং তার আগের বছর ভাঙলে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নান্দাইবাড়ি-মালঞ্চি ও কৃষ্ণপুর বেড়িবাঁধ মেরামত করা হয়। কিন্তু সঠিকভাবে মেরামত কাজ না হওয়ায় এবারও বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে প্রতি বছর ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাদের দাবি, বস্তাভর্তি বালু দিয়ে বেড়িবাঁধ মেরামত না করে সিসি ব্লক এর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ মেরামত করা হলে বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

অপরদিকে মঙ্গলবার মান্দা উপজেলায় বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এ ইউনিয়নের নুরুল্লাবাদ ও পারনুরুল্লাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ৪শ পরিবার এবং ফকিন্নি নদীর তীরবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৬শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রসাদপুর ইউনিয়নের বাইবুল্যা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫শ পরিবার। দীর্ঘদিন যাবৎ নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধ সংস্কার না করার কারণে বেশকিছু অংশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাই নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাঁধের ঝঁকিপূর্ণ অংশে নতুন করে ভেঙ্গে যাওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে অন্যান্য স্থানের নদীপাড়ের মানুষরা।

মান্দা উপজেলার নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এই ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের অন্তত ১হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের পানিবন্দি মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকা গুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে বস্তায় বালু ভর্তি করে মেরামতের কাজ চলছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষনিক তদারকি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, বেড়িবাঁধের আর কোথাও যেন নতুন করে ভেঙে না যায় এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ অংশে বালি ভর্তি বস্তা দিয়ে বন্ধ করার কার্যক্রম চলছে।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন, রোববার সকাল থেকে ছোট যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এ নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলো আমরা উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে জিওব্যাগের মাধ্যমে মেরামতের চেস্টা অব্যাহত রেখেছি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে নদীতে আরও পানি বাড়তে পারে। নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

এই সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সালমান শাহ হত্যার আসামিদের ফোন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে: পুলিশ

বাংলা চলচ্চিত্রের অমর চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যু রহস্য এখনও জট খুলেনি। দীর্ঘ ২৯ বছর পর অপমৃত্যু মামলা হত্যা মামলায় রূপ নেওয়ার পর রমনা থানা...

রিয়া মনিকে তালাক দিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করব: হিরো আলম

আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম আবারও আলোচনায় এসেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রিয়া মনিকে তালাক দেওয়ার পর তিনি দুধ দিয়ে গোসল করবেন।শুক্রবার (১৭...

জনপ্রিয়

অপরাধ

শেরপুরে গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু, সন্দেহে স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ

বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের উত্তর সাহাপাড়া এলাকায় রহস্যজনকভাবে এক গৃহবধূর মৃত্যু ঘটেছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে এ ঘটনা ঘটে। মৃত গৃহবধূর নাম খালেদা আক্তার...

ইসি শাপলা প্রতীক না দিলে রাস্তায় নামবে এনসিপি: সারজিস আলম

নির্বাচন কমিশন (ইসি) যদি শাপলা প্রতীক না দেয় তাহলে রাস্তায় নামবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এমন মন্তব্য করেছেন দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।তিনি...

রাজধানীতে ২৮৫ কেজি গাঁজাসহ নারী মাদক কারবারি গ্রেফতার

রাজধানীর উত্তরা থেকে ২৮৫ কেজি গাঁজাসহ এক নারী মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিবি-ওয়ারী বিভাগ। গ্রেফতারকৃত নারীর নাম রুবি আক্তার (২৬)।জানা...

শেরপুরে গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু, সন্দেহে স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ

বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের উত্তর সাহাপাড়া এলাকায় রহস্যজনকভাবে এক গৃহবধূর মৃত্যু ঘটেছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে এ ঘটনা...

ইসি শাপলা প্রতীক না দিলে রাস্তায় নামবে এনসিপি: সারজিস আলম

নির্বাচন কমিশন (ইসি) যদি শাপলা প্রতীক না দেয় তাহলে রাস্তায় নামবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এমন মন্তব্য করেছেন...

রাজধানীতে ২৮৫ কেজি গাঁজাসহ নারী মাদক কারবারি গ্রেফতার

রাজধানীর উত্তরা থেকে ২৮৫ কেজি গাঁজাসহ এক নারী মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিবি-ওয়ারী বিভাগ।...

ফেব্রুয়ারিতে নয়, জানুয়ারিতেই নির্বাচন দিতে হবে: নুরুল হক নুর

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে নয়, জানুয়ারিতেই হওয়া উচিত, নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই...

মাইলস্টোনে বিমান না পড়ে সচিবালয়ে পড়া উচিত ছিল: হাসনাত আব্দুল্লাহ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ...

দেশ গঠনে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ভূমিকা অব্যাহত থাকবে: সেনাপ্রধান

দেশগঠনে সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের প্রশংসনীয় ভূমিকা ভবিষ্যতেও অব্যাহত...