আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই অন্তর্বর্তী সরকার থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীনের সঞ্চালনায় প্রচারিত এক টকশোতে তিনি এ কথা জানান তিনি।
তিনি জানান, ২০১৮ সাল থেকে রাজনীতিতে আছেন এবং “রাজনীতিতে যারা আছেন, তাদের নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা উচিত নয়”, এই নীতির জায়গা থেকেই এই সিদ্ধান্ত। তবে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না বা জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দেবেন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেননি তিনি।
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মুখ হিসেবে পরিচিত আসিফ মাহমুদ বলেন, পতাকাবাহী গাড়ি বা ক্ষমতার মোহ নয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে অবস্থান নিশ্চিত করতেই তিনি সরকারে আছেন।
আসিফ মাহমুদের বলেন, আমার হাতে এখনও কয়েকটি দায়িত্ব রয়েছে, জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছে, এখন জুলাই সনদ প্রণয়ন বাকি। স্থানীয় সরকারের সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের কাজও শেষ করতে চাই। এসব অসম্পূর্ণ থাকলে তা “ঐতিহাসিক দায়” হয়ে থাকবে বলে জানান তিনি।
এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রথমে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরকার প্রধান হিসেবে মানতে চাননি। এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে আসিফ মাহমুদ জানান, ঘটনাটি সরকার গঠনের আগের, বঙ্গভবনের এক বৈঠকে সেনাপ্রধান আপত্তি তোলেন; যুক্তি ছিল, আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা ড. ইউনূসকে পছন্দ করেন না। পরে তিনি মেনে নিলেও ‘বুকে পাথরচাপা দেওয়া’, এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করেন।
আসিফ বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের বা তাঁর ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ নেই; ৫ আগস্টের আগে-পরে সেনাবাহিনীর অবদান তিনি স্বীকার করেন। দ্বিমতটি কেবল আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধানের মূল্যায়ন ঘিরে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিভিন্ন শক্তি সক্রিয় এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, একটি মহল জাতীয় পার্টিকে (জাপা) প্রধান বিরোধীদল হিসেবে সামনে আনার চেষ্টা করছে; এমনকি আওয়ামী লীগের কিছু ‘ভালো ইমেজের’ নেতাকে জাপার টিকিটে নির্বাচনে আনার তোড়জোড় চলছে। উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্টের পর সামরিক বাহিনী একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিকেন্দ্র হয়ে উঠেছে, উপদেষ্টারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক পটভূমি থেকে এসেছেন, তাই “ক্ষমতার একক কোনো কেন্দ্র নেই।”
তিনি জানান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় নাগরিক সেবায় ব্যাঘাত ঘটছে; এ দায় তার ওপরই পড়ছে। তবে সরকারের ইচ্ছা থাকলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না—কারণ বিএনপি ও তাদের সহযোগী কিছু দল এ নির্বাচনে রাজি নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কুমিল্লার মুরাদনগরের সাম্প্রতিক সহিংসতা, শিক্ষক নিপীড়ন ও চাঁদাবাজির ঘটনায় বাবা বিল্লাল হোসেনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন এমন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অপপ্রচার। তিনি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতির কথাও জানান। একই সঙ্গে স্পষ্ট করেন, তিনি মুরাদনগর থেকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না, তার লক্ষ্য জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতি, যার উপযুক্ত জায়গা ঢাকা।