ডিবি অফিসে টানা কয়েক দিন থাকার পর বৃহস্পতিবার (০১ আগস্ট) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয় থেকে মুক্তি পেয়েছে বৈষম্যবিরোধী অন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। মুক্তির পর শুক্রবার (০২ আগস্ট) সকালে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন ছয় সমন্বয়ক।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, (গত ২৬জুলাই) রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মো: নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে ডিবি পুলিশ জোরপূর্বক মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে আসে। তারা তিন সমন্বয়ক ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল।
পরের দিন ২৭শে জুলাই আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে রাজধানীর সাইন্সল্যাব থেকে জোরপূর্বক ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে আসা হয়। এরপর ২৮শে জুলাই সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে ভোররাতে বাসার দরর্জা ভেঙে জোরপূর্বক ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে আসা হয়।
মূলত আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বকে ছত্রভঙ্গ করতেই গত ১৯ জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়কদের গুম, গ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ‘নিরাপত্তা’র নামে আমাদের ছয় সমন্বয়ককে ৭ দিন ধরে ডিবি হেফাজতে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবি প্রধান হারুন রশিদ আমাদের নিরাপত্তার কথা বললেও আন্দোলন থেকে আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যই ডিবি অফিমে রাখা হয়েছিল।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবি প্রধান বলেন আদালতের আদেশ ছাড়া নাকি আমাদের এখান থেকে ছাড়া যাবে না। যারা নিরস্ত্র শিক্ষার্থী-নাগরিককে গুলি করে হত্যা করে তাদের হেফাজতে আমরা কেউই নিরাপদে থাকতে পারি না। সরকারের নিকট আমরা এই প্রহসনের নিরাপত্তা চাই না। আমরা আমাদের ভাই বোনদের হত্যার বিচার চাই।
আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়ককের ওই ভিডিও স্টেটমেন্টটি আমরা কেউ স্বেচ্ছায় দেইনি। ডিবি অফিসে আমাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও’টি করা হয়। আমাদের সবাইকে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে এনে ১৩ ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট প্রচার করা হয়। আমাদের
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা দেখা করতে আসলে, তাদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
অন্যায়ভাবে সমন্বয়কদের আটক, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের গণ-গ্রেফতার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গত (৩০ জুলাই) রাত থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের ডিবি অফিসে গ্রেফতার অবস্থায় অনশন কর্মসূচী শুরু করেন। পরবর্তীতে খবরটি জানামাত্র সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুলাহ ও নুসরাত তাবাসসুমও অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।
তাদের অনশনের কথা পরিবার ও মিডিয়া থেকে গোপন করা হয় বলেও জানিয়েছেন এই ছয় সমন্বয়ক। প্রায় ৩২ ঘন্টারও অধিক সময় অনশনের পরে ডিবি প্রধান আমাদের মুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিলে অনশন ভাঙা হয়। আমাদেরকে গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। গত ৭দিন ডিবি অফিসে আমাদের ও আমাদের পরিবারকে নানা হয়রানি, নির্যাতন ও নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।