গাজীপুরের কোণাবাড়িতে অপহরণের পর শিশু তামিম মুক্তি পেয়ে বাবাকে সবকিছু জানিয়ে দিতে পারে ভেবে তাকে হত্যা করে অপহরণকারীরা। শুক্রবার (১২ জুলাই) এক যৌথ অভিযানে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সাগর মিয়া ও তার সহযোগী হাসান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১।
নিহত শিশু তামিম (৬) ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার মাটিজাপুর গ্রামের মো: নাজমুল হোসেনের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃত হাসান মিয়া (২০) ময়মনসিংহের মুক্তগাছা থানার পাউরিতলা গ্রামের মৃত মো: মজনু মিয়ার ছেলে ও একই জেলার ফুলপুর থানার কুশকান্দা গ্রামের মো: ইস্কান্দার মিয়ার ছেলে সাগর মিয়া (২২)। আসামি সাগর শিশু তামিমের চাচাতো ভাই। হাসান ও সাগর শিশু তামিমের বাবার মালিকানাধীন ববির কাটার গুদামে চাকরি করতো।
শনিবার (১৩ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ জানায়, রবিবার (০৭ জুলাই) তামিম নামের ওই শিশুটি নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া না গেলে ওইদিন কোণাবাড়ি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে শিশুটির পরিবার।
পরদিন অপরিচিত এক নাম্বর থেকে ফোন করে নিখোঁজ শিশুটির বাবার কাছে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চায় অপহরণকারীরা। পরে বৃস্পতিবার (১০ জুলাই) কোনাবাড়ী থানার আমবাগ মধ্যপাড়া এলাকার একটি কলাবাগান থেকে শিশু তামিমের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেদিনই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে শুক্রবার দিনব্যাপী অভিযানের পর সাগর ও হাসানকে প্রেপ্তার করে র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের আসামিরা র্যাবকে জানিয়েছে, শিশু তামিমের বাবার ববিন কাটার গুদামে চাকরি করতো সাগর ও হাসান মিয়া। ঋণগ্রস্ত সাগর ও হাসান মুক্তিপণের টাকায় আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য শিশু তামিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৭ জুলাই সন্ধ্যার দিকে তামিমের বাবার প্লাস্টিকের ববিন কাটার গুদামের সামনে থেকে হাতি দেখানোর কথা বলে শিশু তামিমকে তাদের ভাড়া করা বাসায় নিয়ে যায়।পরে তামিমের হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে ওই বাসার বাথরুমের ভেতর আটকে রেখে মুক্তিপণের বিষয়ে তারা দুজনে পরামর্শ করে।
সাগর ও হাসান শিশু তামিমের পূর্ব পরিচিত, মুক্তি পেয়ে শিশুটি তার বাবাকে পুরো ঘটনা জানিয়ে দিতে পারে, এই ভয়ে সেদিন রাত ৮টার দিকে বাথরুমের ভেতর সাগর শিশুটির পা চেপে ধরে এবং হাসান গলা চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
হত্যার পর ওই রাতেই শিশু তামিমের মরদেহ কোনাবাড়ীর আমবাগ মধ্যপাড়া এলাকার এক কলাবাগানের মধ্যে ফেলে দেয়। পরদিন সোমবার (০৮ জুলাই) ঘাতক হাসান শিশু তামিমের বাবার কাছে ফোন করে জানায় তামিম তাদের হেফাজতে আছে, নগদ ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হলে তামিমকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
মামলার পর পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও ছায়া তদন্তে নামে। তদন্তের একপর্যায়ে র্যাব আসামিদের শনাক্ত করে ১২ জুলাই বিকালে হাসান মিয়াকে মুক্তাগাছা উপজেলার কদুরবাড়ী বাজার ও সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাগর মিয়াকে ফুলপুর থানাধীন কুশকান্দা এলাকা থেকে আটক করা করে। আটককৃত আসামিদের গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছে।