মিথ্যা মামলা করায় এক নারী কারাগারে, আরেক নারীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি। নওগাঁয় ধর্ষণ চেষ্টার মিথ্যা মামলায় তিন যুবককে ফাঁসানোর অভিযোগে মাবিয়া বেগম (৪৮) নামে এক নারীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো: মেহেদী হাসান তালুকদার এর কোর্টে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে মাবিয়া বেগমকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
মোছা: মাবিয়া বেগম বদলগাছী উপজেলার চাপাডাল গ্রামের আসাদুল হাকিমের স্ত্রীর পক্ষে জামিন শুনানী করেন এ্যাডভোকেট শুভ্র সাহা। জামিনের বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌসুলী এ্যাডভোকেট মো: মকবুল হোসেন।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) একই আদালতে যৌন পীড়নের আরেক মিথ্যা মামলায় ৪ জন যুবককে ফাঁসানোর অভিযোগে নিগার সুলতানা ওরফে নাইচ (২৭) নামে আরেক নারীর বিরুদ্ধে আটকের নির্দেশ দেন বিচারক মো: মেহেদী হাসান তালুকদার। বদলগাছী উপজেলার শেরপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রউফের মেয়ে নিগার সুলতানা ।
মিথ্যা মামলা করায় আদালত সূত্রে জানা যায়, (২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর) বদলগাছী উপজেলার চাপাডাল গ্রামের গৃহবধূ মোছা: মাবিয়া বেগম একই গ্রামের তুহিন ও তহিদুলসহ ৩ জন যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে এ মামলায় পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয় কোর্ট। তদন্ত শেষে ঘটনাটির সত্যতা নেই বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী দরখাস্ত দাখিল করেন মোছা: মাবিয়া বেগম। এরপর ঘটনাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। ঘটনাটির সত্যতা রয়েছে বলে অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে এ মামলায় তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহন শেষে গত (১০ আগস্ট) অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সকল আসামীকে খালাস প্রদান করে আদালত।
এরপর (১ অক্টোবর) মিথ্যা মামলায় মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি হওয়ার অভিযোগ এনে শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর সতেরো ধারায় মাবিয়া বেগমসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ভুক্তভোগীরা করেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে আদালত। আজ ওই মামলায় জামিনের প্রার্থনা করে আদালতে উপস্থিত হলে উভয় পক্ষের শুনানী শেষে মাবিয়া বেগমের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক মো: মেহেদী হাসান তালুকদার।
অপরদিকে, (২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট) বদলগাছী উপজেলার শেরপুর গ্রামের মোছা: নিগার সুলতানা একই গ্রামের মো: সোহেল রানাসহ ৪ জন যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে এ মামলায় পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। তদন্ত শেষে ঘটনাটির সত্যতা নেই বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী দরখাস্ত দাখিল করেন নিগার সুলতানা। এরপর ঘটনাটি আমলে নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করে আদালত। পরবর্তীতে সাক্ষ্যগ্রহন শেষে গত ২১ সেপ্টেম্বর অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সকল আসামীকে খালাস প্রদান করে আদালত। এরপর আজ মিথ্যা মামলায় শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি হওয়ার অভিযোগ এনে শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর সতেরো ধারায় নিগার সুলতানাসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী শেরপুর গ্রামের মৃত মো: আজিজুল হকের ছেলে মো: সোহেল রানা।
এ অভিযোগটি আমলে নিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে আদালত। আগামী ৩০ জানুয়ারীর মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার পূর্বক এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন বিচারক মো. মেহেদী হাসান তালুকদার।
রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌশলী এ্যাডভোকেট মো: মকবুল হোসেন জানান, ধর্ষণ চেষ্টার মিথ্যা মামলা করায় মোছা: মাবিয়া বেগম নামে এক নারীকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক মো: মেহেদি হোসেন তালুকদার । যৌন পীড়নের আরেক মিথ্যা মামলায় মোছা: নিগার সুলতানার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় সাধারন জনগন আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যেকোনো মামলা গ্রহণের আগে অবশ্যই পুলিশ ও আইনজীবীদের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা উচিত। সকলের যৌথ প্রচেষ্টা থাকলে সাধারণ মানুষদের মিথ্যা মামলায় আর হয়রানি হতে হবে না।