মাদারীপুরে মাদ্রাসাছাত্রী সানজিদা আক্তার দীপ্তি (১৭)কে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ইজিবাইক চালক সাজ্জাদ হোসেন খানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে মাদারীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শরীফ এ এম রেজা জাকের এই রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত সাজ্জাদ হোসেন খান (৫৫) সদর উপজেলার পূর্ব খাগদী এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলাম খানের ছেলে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব খাগদী এলাকার একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে নিহতের বাবা হাজী মো. মজিবর ফকির মরদেহটি তাঁর মেয়ে দীপ্তির বলে শনাক্ত করেন।
এর দুই দিন পর ১৫ জুলাই অজ্ঞাতদের আসামি করে ধর্ষণের পর হত্যা মামলা করেন দীপ্তির বাবা।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ ইজিবাইক চালক সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতে তোলা হলে তিনি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে সাজ্জাদ জানান, ২০১৯ সালের ১১ জুলাই বৃষ্টির মধ্যে শহরের ইটেরপুল থেকে চরমুগরিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর ইজিবাইকে ওঠেন দীপ্তি। সেদিন অন্য কোনো যাত্রী না থাকায় ‘ব্যক্তিগত কাজ আছে’ বলে তাঁকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান সাজ্জাদ। পরে ঘরের ভেতরে আটকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি।
ঘটনা গোপন রাখতে মরদেহে ইট বেঁধে বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে দেন সাজ্জাদ। দুদিন পর মরদেহটি ভেসে উঠলে পুলিশ খবর পেয়ে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শহিদুল ইসলাম সাজ্জাদকে একমাত্র অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
এই মামলায় ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত সাজ্জাদ হোসেন খানকে মৃত্যুদণ্ড দেন এবং নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী ও নিহতের বাবা হাজী মো. মজিবর ফকির বলেন, ‘আমার মেয়েকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে সাজ্জাদ। আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আমি চাই দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক।’
রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট শরীফ সাইফুল কবির বলেন, ‘সাজ্জাদ তার অপরাধের যথাযথ শাস্তি পেয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য দিয়ে ঘটনা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এই রায় অন্যদের জন্যও সতর্কবার্তা হবে। দ্রুত রায় কার্যকরের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, ফরিদপুরে শিশু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা ভোগের পর ২০১১ সালে মুক্তি পান সাজ্জাদ হোসেন খান। এরপর ২০১৯ সালের ১১ জুলাই আবারও এই নির্মম ঘটনার সঙ্গে জড়িত হন তিনি।


