একে অপরকে ভিডিও কলে রেখে গলায় ফাঁস দিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকা আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার (২৬ অক্টেবর) কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেতুয়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ সময় প্রেমিকা খাদিজা আক্তার উর্মি দেশের স্বামীর বাড়িতে ছিলেন। অপর দিকে প্রেমিক সাফায়েত হোসেন ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে।
জানা যায়, স্বামীর বাড়ি থেকে নববধূ খাদিজার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় মরদহের পাশ থেকে ১টি চিরকুট পাওয়া গেছে। রবিবার (২৭ অক্টেবর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: শাহ আলম।
নিহত গৃহবধূ খাদিজা আক্তার উর্মি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা এলাকার মাটিয়ারা গ্রামের জামাল মো: হোসেনের মেয়ে। তিনি চৌয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন ।
অন্যদিকে, ভিডিও কলে যুক্ত থাকা প্রেমিক নিহত ওমান প্রবাসী সাফায়েত হোসেন (২৩) কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পূর্ব জোড়কানন ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের বেতুয়া গ্রামের রংমিস্ত্রী মো: আরিফুর রহমানের সঙ্গে খাদিজা আক্তারের বিয়ে হয়। ওই সময় বাল্য বিয়ে হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান আতঙ্কে গোপনে বিয়ের আয়োজন করা হয়।
উদ্ধারকৃত চিরকুটে লেখা ছিল, চাইছিলাম আমরা দু’জনে এক সঙ্গে বেঁচে থাকতে। কিন্তু তোমরা আমাদের বাঁচতে দিল না, আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। আর ও বেঁচে থাকলেও তোমরা ওকে খুন করতে এবং ওদের পরিবারকে জেলের ভাত খাওয়াইতে। তাই আমি নিজেও দুনিয়া ছাড়লাম, আর ওরেও আমার সঙ্গে নিয়ে গেলাম। আপনাদের কাছে আমার একটা শেষ ইচ্ছা। মা-বাবা, ভাই বোনদের কাছে আমার শেষ আবদার, দুনিয়াতে যেহেতু আমাদের এক সঙ্গে থাকতে দেয় নাই তাই আমাদের দাফনটা যেন একসাথে হয়। একদিন আগে পরে হলেও একই কবরস্থানে যেন আমাদরে দু’জনকে দাফন করে।
নিহত উর্মির মা নুরুন্নাহার জানান, গত ১৪ অক্টোবর আমাদের আত্মীয় বেতুয়ার আরিফুর রহমানের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিই। বিয়ের পর মেয়ে স্বামীর বাড়িতে হাসি খুশিতেই ছিল। শনিবার রাতে হঠাৎ শুনি উর্মি ও তার প্রেমিক সাফায়েত ভিডিও কলে আত্মহত্যা করেছে।
নিহত প্রবাসী সাফায়াতের বাবা আবদুল খালেক বলেন, গত ১ বছর আগে আমার ছেলেকে ওমান পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে শুনি আমার ছেলে হঠাৎ ওমানের কর্মস্থলে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরপর খবর নিয়ে শুনলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমার ছেলের সঙ্গে খাদিজা আক্তার উর্মি নামের এক মেয়ের পরিচয় হয়েছিল। হঠাৎ মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আমার ছেলে সাফায়েত অসুস্থ হয়ে গেছে। পরে শনিবার (২৬ অক্টেবর) রাতে সেই মেয়ে এবং আমার ছেলে এক সঙ্গে ভিডিও কলে চিরকুট লিখে গলায় ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি। ছেলেটা আমার এভাবে চলে যাবে আমারা ভাবতেও পারিনি।
লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: শাহ আলম জানান, কয়েকদিন আগেই মেয়েটির বিয়ে হয়েছে বলে শুনেছি। গত শনিবার প্রবাসী প্রেমিক সাফায়েতকে ভিডিও কলে রেখে স্বামীর বাড়িতে ঘরের সিলিং গলায় ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। প্রবাসী প্রেমিকও একইভাবে আত্মহত্যা করেছেন বলে শুনেছি।
তিনি আরও জানান, গত শনিবার রাত ১১টার দিকে আমরা নববধূর খাদিজার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নিতহ খাদিজার মরদেহের পাশ থেকে তাঁর হাতে লিখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে আত্মহত্যার আগে মেয়েটি তার মা-বাবার উদ্দেশ্যেে এই চিরকুটটি লিখেছিল। এই ঘটনায় নিহত খাদিজার ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।