কিশোরগঞ্জের তরুণ শিশু সংগঠক মাহবুব আল হাসানকে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার-২০২৫ (শিশু নোবেল)-এর মনোনয়ের তালিকায় স্থান দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে এই স্বীকৃতি ও মনোনয়ন মাহবুবের জন্য বিশেষ প্রেরণা।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) কিডস রাইটসের ওয়েবসাইট থেকে তিনি নিজের মনোনয়নের কথা জানতে পারেন।
মাহবুব আল হাসান কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া এলাকার বাসিন্দা। ২০২২ সালে তিনি আহমাদু জুবাইদা দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করেন এবং ২০২৪ সালে হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদরাসা থেকে আলিম পাশ করেছেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শিশুদের অধিকার ও পরিবেশ সচেতনায় কাজ করাই মাহবুবের মূল অনুপ্রেরণা। ২০২২ সালে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের সংগঠন ‘দি চেঞ্জ বাংলাদেশ’। সংগঠনটির প্রধান উদ্দেশ্য, শিশুদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং পরিবেশ রক্ষায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। মাহবুব শিশুদের সঙ্গে মিলে নিয়মিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি করেন, দরিদ্র শিশুদের মধ্যে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেন, চারা, কলম, পেনসিল, খাতা ইত্যাদি এবং স্থানীয় স্কুল-সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
মাহবুবের কাজ শুধু পরিবেশেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি হাওর অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সমস্যা ঘেঁটে তা বদলাতে সচেষ্ট। দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে দেখেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আর্থিক কষ্টের কারণে হাওরের অনেক শিশু নিয়মিত শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই বাস্তবতা বদলাতে মাহবুব পাঠশালা সহযোগিতা, অভিভাবক শিক্ষাকরণ ও স্কুলে ফেরানো উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্বল্পসাধ্যের সময়ে অসুস্থ শিশুর রক্ত জোগাড়ে সম্মুখীন সমস্যাগুলো কমাতে মাহবুব তৈরি করেছেন ‘ব্লাড খুঁজি’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্ম দ্রুত রক্তের ব্যবস্থা করে দেয়ার মাধ্যমে ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় সাড়া ফেলেছে।
মাহবুব নিজে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, পরিবর্তন শুরু হয় ছোট একটি পদক্ষেপ থেকে। আমি চাই প্রতিটি শিশু যেন নিজের ভেতরের শক্তিটা চিনতে পারে, সে শক্তি দিয়ে সে পৃথিবীকে একটু হলেও ভাল করে তুলতে পারে।” তার এই বিশ্বাসই তাকে পরিচালিত করে, শিশুরাই ভবিষ্যৎ, তাই তাদের জন্য এখনই কাজ করা প্রয়োজন, বলেই তিনি মনে করেন।
কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এমন একশোসহ আরো কয়েকশ শিশুকে মনোনয়ন দেয় যারা সাহস ও নিষ্ঠার সঙ্গে শিশু কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। এ বছর মোট ১৭২ জন শিশুকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকেও কয়েকজন রয়েছেন—মাহবুব তাদের একজন।