গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব ও পেশ ইমাম মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীর রহস্যজনক নিখোঁজেররহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
নিখোঁজের চার দিন পর জানা গেছে, তিনি অপহৃত হননি বরং নিজেই টঙ্গী থেকে বের হয়ে পঞ্চগড় গিয়েছিলেন। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে তাকে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তাকে আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন), মোহাম্মদ তহিরুল হক চৌহান জানান, তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, মহিবুল্লাহ ইসকন কর্তৃক অপহৃত হয়েছেন বলে যে অভিযোগ করা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি শ্যামলী পরিবহনের বাসে নিজেই টিকিট কেটে পঞ্চগড় যান। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার গতিবিধি ট্র্যাক করে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইমাম মহিবুল্লাহর সঙ্গে একই বাসে থাকা কয়েকজন যাত্রী ও বাসের সুপারভাইজারকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইমাম মহিবুল্লাহ নিজেই ঘটনাটি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি হাঁটতে গেছি। হাঁটতে যাওয়ার পরে আমার মাথায় আসলো যে আমি চলতে থাকি, যাই। কোন দিকে যাই বলতে পারি না। একপর্যায়ে অটো পাইছি, অটোতে উঠছি, মীরেরবাজার নামছি। নামার পরে মনে চাইল আমি জয়দেবপুর যাই। সিএনজিতে করে জয়দেবপুর গেছি। এরপর মনে হলো আমি বাসে উঠি। বাসে উঠে গাবতলী গেছি। সেখান থেকে মনে চাইল আমি টিকিট করি। কই যাব খেয়াল হইল, পঞ্চগড় যাই। অনেক রাতে পঞ্চগড় নামছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নামার পরে হাঁটতেছিলাম, কোন দিকে হাঁটতেছি জানি না। হাঁটতে হাঁটতে দেখি পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ লাইনস এগুলো পার হয়ে গেছি। একপর্যায়ে একটা শিকল কুড়িয়ে পাইলাম। ওইটা নিয়ে এক যায়গায় প্রস্রাব করতে বসলাম। প্রস্রাব করলাম আর পায়জামায় প্রস্রাব লাগল, এর পরে জামায়ও লাগল। জামা খুইলা ফালাইলাম, পায়জামাও খুললাম। কিন্তু খোলার পরে আবার পরতে হবে এই জিনিসটা আমি আর পারি নাই ঠাণ্ডায়। ঠাণ্ডায় ওইখানে শুইয়া পড়লাম আর পায়ে শিকল দিলাম। এইটা কেন করতেছি এইটার কোনো চিন্তাভাবনা আমার নাই, খালি যা মাথায় আসতেছে তা করতেছি।’
অন্যদিকে, আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানান, মহিবুল্লাহ মিয়াজীর অপহরণের অভিযোগ পুরোপুরি অসঙ্গত। তিনি বলেন, ‘তিনি দাবি করেছিলেন ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে টঙ্গীর শিলমুন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে তাকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সকাল ৬টা ৫২ মিনিটে তিনি নিজ বাসা থেকে বের হন, ৬টা ৫৩ মিনিটে মসজিদ ত্যাগ করেন এবং ৭টা ১৮ মিনিটে ফিলিং স্টেশনের সামনে দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন।’
সায়ের আরও জানান, ৪টি ভিন্ন এঙ্গেল থেকে নেওয়া ফুটেজে অপহরণের কোনো চিহ্ন নেই। বরং দেখা যায়, মহিবুল্লাহ একাই দ্রুত গতিতে হেঁটে যাচ্ছেন। স্থানীয় ফিলিং স্টেশনের
ব্যবস্থাপক মো. সোলেইমানও বলেন, ‘তিন দফায় পুলিশের বিভিন্ন শাখা আমাদের সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ করেছে। ওই হুজুরকে আমাদের ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে অপহরণ করা হয়নি।’
উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর সকালে টঙ্গীর বাসা থেকে হাঁটতে বের হয়ে নিখোঁজ হন মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজী। পরদিন সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সিতাগ্রাম এলাকায় মহাসড়কের পাশে শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়।


